রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন
ঢাকা সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ইলেকশন অবজারভেশন মিশনের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এসময় আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে ইইউ’র টেকনিক্যাল সাপোর্টের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে প্রতিনিধি দলকে জানান জামায়াত আমির।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জামায়াত আমিরের বসুন্ধরার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ডা. শফিকুর রহমান প্রতিনিধিদলকে বলেন, শুধু নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নয়, বরং একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইইউ’র টেকনিক্যাল সাপোর্টের সহযোগিতা প্রয়োজন।
বৈঠকে জামায়াত আমির আরও উল্লেখ করেন, গত দেড় যুগে গণতন্ত্র দমন, বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন এবং জামায়াতে ইসলামীর সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে দেওয়া হয়নি। আমরা আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত, তবে শর্ত হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান করে তার আলোকে নির্বাচন অবশ্যই ফ্রি, ফেয়ার ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব তথ্য জানান। গোলাম পরওয়ার বলেন, ইইউ প্রতিনিধিদল আমিরে জামায়াতের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে মতবিনিময় করেছেন। তারা জানিয়েছেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময়ই তাদের সফরের মূল উদ্দেশ্য। তারা নির্বাচনকালীন ৬৪টি জেলায় পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা করেছেন এবং প্রত্যেক জেলায় একজন প্রতিনিধি পাঠাবেন। নির্বাচন শেষে পর্যবেক্ষণের বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে বলে তারা আমিরে জামায়াতকে অবহিত করেন।
বৈঠকে প্রবাসীদের ভোট ও ভোটাধিকার সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন অবজারভেশন টিম। তখন জামায়াত আমির বলেন, জামায়াতই প্রথম এক কোটির বেশি প্রবাসী ভোটারের ভোটাধিকার নিয়ে দাবি তুলেছে। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশন বরাবর জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ও সরকার তা গ্রহণ করে ইতিমধ্যে প্রবাসীরা যাতে ভোট দিতে পারেন সে প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইলেকশন অবজারভেশন টিম জানতে চেয়েছেন, জামায়াতে ইসলামী যদি আগামীতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব পায়, তাহলে মূল এজেন্ডা কী হবে? এ ব্যাপারে জামায়াত আমির তিনটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো
প্রথমত: এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নৈতিকতা, উৎপাদনমুখী, টেকনিক্যাল, দক্ষতা, বৈষয়িক, মানবিক সব দিক থেকে নাগরিকরা যোগ্য হতে পারে সে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দ্বিতীয়ত: করাপশন ফ্রি সোসাইটি গড়ে তোলা হবে। সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতি চেপে বসেছে। জামায়াতে ইসলামী দায়িত্ব পেলে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা হবে।
তৃতীয়ত: সোস্যাল জাস্টিস। সামাজিক ন্যায়বিচারের দারুন সংকট আমাদের সমাজে রয়েছে। বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকারের কারণে কীভাবে মানুষ বঞ্চিত হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে, জামায়াতের রাজনৈতিক কার্যালয় বন্ধ করা হয়েছে, ভিন্নমতের ওপরে জুলুম করা হয়েছে, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে-এগুলো বন্ধ করবো।
বৈঠকে ইইউ ইলেকশন অবজারভেশন মিশনের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দলের মধ্যে টিম লিডার ইলেক্টোরাল ও পলিটিক্যাল এক্সপার্ট মেটে বাক্কেন, লিগ্যাল এক্সপার্ট ম্যানুয়েল ওয়ালি এবং ডেপুটি হেড অব ডেলিগেশন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশন টু বাংলাদেশ বেইবা জারিনা উপস্থিত ।
এ দিকে, বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের মেডিকেল থানার আমির ডা. এসএম খালিদুজ্জামান এবং আমিরে জামায়াতের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।