রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৭ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
ধর্মীয় নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ছাড়া রাষ্ট্র সমাজ টিকে থাকতে পারে না : ধর্ম উপদেষ্টা ৩০০ আসনে এনসিপির ১৪৮৪ মনোনয়ন ফরম বিক্রি রাতে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বিএনপি নেতারা সুষ্ঠু নির্বাচনে ইসিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে: সেনাপ্রধান ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই: জামায়াত আমির প্রায় ৫০০ বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল, ৩৪২ ফিলিস্তিনি নিহত এবার মিয়ানমার উপকূলে ৫ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প এখন সময় এসেছে ইসলামের বাংলাদেশ দেখার: মামুনুল হক দাঁড়িপাল্লা গণমানুষের আস্থার প্রতীকে উপনীত হয়েছে: শফিকুর রহমান নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দেখতে পাচ্ছি না: নাহিদ ইসলাম

লন্ডনে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টা, সরকারের তীব্র নিন্দা

লন্ডনে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলমের ওপর হামলার চেষ্টার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সরকার। গতকাল অন্তবর্তীকালীন সরকার এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানায়।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, গত ১২ সেপ্টেম্বর মাহফুজ আলম বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লবের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে লন্ডনের সোয়াস-ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন আয়োজিত কর্মসূচি শেষে বের হলে একদল বিক্ষোভকারী বাংলাদেশ হাইকমিশনের গাড়িতে ডিম নিক্ষেপ করে এবং কিছু সময়ের জন্য গাড়ির পথরোধের চেষ্টা চালায়। তবে মেট্রোপলিটন পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আক্রান্ত গাড়িতে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ছিলেন না।বাংলাদেশ হাইকমিশন জানায়, পুলিশ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখেছিল এবং উপদেষ্টার সফরের সময় ‘পূর্ণ নিরাপত্তা’ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

এর আগে নিউইয়র্কে সরকারি সফরকালে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একই ধরনের হামলার শিকার হন। একাধিক সূত্র মতে, বাংলাদেশের কনসুলেট জেনারেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিক্ষোভকারীরা ডিম ও বোতল নিক্ষেপ করে এবং কাচের দরজা ভেঙে ফেলে।

ওই ঘটনার পর মিশন স্টেট ডিপার্টমেন্টের স্থানীয় কার্যালয়সহ স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানায়।প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘সরকার সর্বশেষ এই হামলাকেও একই দৃঢ়তায় নিন্দা জানায়, যেভাবে আমরা নিউইয়র্কের ঘটনার পর বলেছিলাম। সরকার, বাংলাদেশের জনগণ এবং উভয় আতিথ্যদাতা দেশের কর্তৃপক্ষ সভ্যতার পক্ষে দাঁড়ায়, আর সন্ত্রাসীরা বর্বরতা ও ভয় দেখানোর দুনিয়ায় বাস করে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘গণতন্ত্রে যুক্তির জায়গায় আক্রমণ কিংবা বিতর্কের জায়গায় সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই।

আমরা নিউইয়র্কের ঘটনার পরও বলেছি, সহিংসতা কোনো প্রতিবাদ নয়, ভয় দেখানো মত প্রকাশের স্বাধীনতা নয়। সেই বক্তব্য লন্ডনের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। ’ 

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার পুনর্ব্যক্ত করেছে, মতপ্রকাশ, সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মৌলিক স্বাধীনতা গণতন্ত্রের ভিত্তি, তবে তা অবশ্যই দায়িত্বশীলতা ও পারস্পরিক সম্মানের সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে।

সরকারের বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, কূটনৈতিক গাড়িতে হামলা চালানো এবং তার চলাচল ব্যাহত করার চেষ্টা কেবল বেপরোয়া কাজ নয়, বরং তা জাতিগুলোর মধ্যে সংলাপ রক্ষার আন্তর্জাতিক শিষ্টাচারকেও আঘাত করে।

মেট্রোপলিটন পুলিশের তাৎক্ষণিক সাড়া প্রশংসিত হয়েছে এবং অপরাধীদের শনাক্ত ও যথাযথ আইনি ব্যবস্থার জন্য অব্যাহত সহযোগিতার আহ্বান জানানো হয়েছে।

যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বা সহায়তা করেছে তাদের উদ্দেশে বিবৃতিতে বলা হয়: ‘যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড সংগঠিত করেছে বা সমর্থন করেছে, তাদের প্রতি আমাদের বার্তা স্পষ্ট, প্রাপ্তবয়স্ক হোন। যদি আপনারা নিজেদের মতাদর্শে বিশ্বাস করেন, তাহলে শান্তিপূর্ণ, আইনসম্মত ও মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে তা প্রকাশ করুন। ডিম, ঘুষি ও ভিড়ের নাটক দিয়ে কোনো যুক্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না; বরং তা প্রমাণ করে আপনার হাতে আর কোনো যুক্তি অবশিষ্ট নেই। ’

বিশ্ববিদ্যালয়, আয়োজক প্রতিষ্ঠান ও প্রবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘সভ্য সংলাপের পক্ষে দৃঢ় থাকুন। কঠিন আলোচনা হোক, মতবিরোধ থাকুক—কিন্তু বক্তা, শ্রোতা ও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই তা করতে হবে। কোনো আন্দোলনের শক্তি তার আওয়াজ বা সহিংসতায় নয়, বরং তার শৃঙ্খলা, মর্যাদা ও দায়িত্বশীলতায় নিহিত। ’

এই ঘটনায় সরকার তিন দফা পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে :

১. মেট্রোপলিটন পুলিশকে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত সম্পন্ন করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং ভিডিও ও অন্যান্য প্রমাণ ব্যবহার করে ভাঙচুর, হামলা ও প্রতিবন্ধকতায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানাচ্ছে।

২. প্রবাসী রাজনৈতিক নেতা ও সম্প্রদায় সংগঠকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে তারা যেকোনো সহিংসতা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের প্রকাশ্য ও সুস্পষ্ট নিন্দা জানায়, দলীয় আনুগত্য যাই থাকুক না কেন।

৩. শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার পুনর্ব্যক্ত করছে—কিন্তু একইসঙ্গে কর্মকর্তাসহ শিক্ষার্থী ও নাগরিকদের ভয় ছাড়া বক্তব্য রাখার ও সমাবেশ করার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে জোর দিচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গণতন্ত্র আবেগ দাবি করে; একইসঙ্গে আত্মসংযমও দাবি করে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকাশের পথচলায়, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা ও মর্যাদা সুরক্ষিত, সেই লক্ষ্যে উভয়ই অপরিহার্য। ’

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved bijoykantho© 2025