শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২৭ পূর্বাহ্ন

খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিতে পারছেন: ডা. জাহিদ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিতে পারছেন বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, উনার (খালেদা জিয়া) অবস্থা স্থিতিশীল। চিকিৎসকদের পরামর্শ মোতাবেক যে চিকিৎসা উনাকে দেওয়া হচ্ছে, সেই চিকিৎসা উনি ঠিকমতো গ্রহণ করতে পারছেন। উনার শারীরিক অবস্থা কয়েকদিন আগেও যে অবস্থায় ছিল… আলহামদুলিল্লাহ উনি সেটি মেনটেইন করতে পারছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেস্বর) বিকেলে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান।

‘আশাবাদী আমরা’

বিএনপি চেয়ারপারসন সুস্থ হয়ে উঠবেন- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘উনার সঙ্গে সম্পৃক্ত আমরা যারা এই হাসপাতালের চিকিৎসক অত্যন্ত আশাবাদী ইনশাআল্লাহ, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যাবেন।’

তিনি বলেন, ‘তারপরও মনে রাখতে হবে, উনার বয়সের চেয়ে বেশি উনার যে অসুস্থতা এবং উনাকে পরিকল্পিতভাবে যেরকম অসুস্থ অবস্থার মধ্যে বিগত সময়ে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, চিকিৎসা দেওয়া যায়নি অথবা দিতে দেওয়া হয়নি; সেই কারণেই উনার শারীরিক জটিলতা মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে…. এবার উনি বেশি সময় পার করছেন।’

‘তারেক-জুবাইদা সার্বক্ষণিক দেখছেন’

জাহিদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি শুধু আপনাদের এটুকু অবহিত করতে চাই- দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী জুবাইদা রহমান সবসময় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন। উনার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর সহধর্মিণী সৈয়দ শামিলা রহমান, ম্যাডামের ভাই শামীম এস্কান্দার, বড় বোন সেলিনা ইসলামসহ পরিবারের সদস্যরা সার্বক্ষণিকভাবে আছেন, খোঁজ-খবর রাখছেন।’

নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান

অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘এই হাসপাতালে আরও অনেক রোগী চিকিৎসাধীন। সেসব রোগীর চিকিৎসায় যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহযোগিতা করছেন। আমি আপনাদের মাধ্যমে সকলকে অনুরোধ করতে চাই, এই হাসপাতাল সবার জন্য উন্মুক্ত। এই হাসপাতালের সেবা গ্রহণ করার সুযোগ সবারই আছে। কাজেই আপনারা যারা সেবা গ্রহণ করবেন এবং কোনো অবস্থায়ই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য আপনাদের চিকিৎসার কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না এবং আমরা কোনো নেতাকর্মী কোনো ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টি করবো না। এটা আমরা বিশ্বাস করি, এটা আমরা আশা রাখি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান, উপদেষ্টা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ, এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অধ্যাপক জাহিদ।

দীর্ঘদিন ধরে লিভার, কিডনি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও আর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী জটিলতায় ভুগছেন খালেদা জিয়া। বাসায় অবস্থানকালে শ্বাসকষ্ট, কাশি ও জ্বর বেড়ে যাওয়ায় ২৩ নভেম্বর তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি হওয়ার পর পরীক্ষা–নিরীক্ষায় ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও কিডনিতে তীব্র অবনতি দেখা দেয়, ফলে তাকে কেবিন থেকে সরিয়ে দ্রুত ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়।

গত ২৭ নভেম্বর তার একিউট প্যানক্রিয়েটাইটিস ধরা পড়ে, যার চিকিৎসা এখনো চলছে। একই সঙ্গে শরীরে গুরুতর ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাল সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ায় দেওয়া হচ্ছে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল চিকিৎসা।

চিকিৎসকরা জানান, কিডনির কার্যক্ষমতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার ডায়ালাইসিস শুরু করা হয় এবং এখনো নিয়মিত ডায়ালাইসিস দিতে হচ্ছে। পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও ডিআইসি’র জটিলতায় প্রয়োজন হচ্ছে রক্ত ও রক্তের বিভিন্ন উপাদান ট্রান্সফিউশন।

এছাড়া নিয়মিত ইকোকার্ডিওগ্রামে অ্যাওর্টিক ভাল্ভে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ‘টিইই’ পরীক্ষায় ইনফেকটিভ অ্যানডোকার্ডাইটিস ধরা পড়ে। এরপর আন্তর্জাতিক গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করেন বোর্ডের চিকিৎসকরা।

দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন শাখার বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল টিম প্রতিদিন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved bijoykantho© 2025