বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:০৯ অপরাহ্ন
গতকাল রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সোমবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলার রায় ঘোষণাকে ঘিরে রাজধানীতে উত্তেজনা বেড়েছে। রায়কে সামনে রেখে রাজধানীতে হামলার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নগরজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) চার শতাধিক সদস্য রাজধানীতে মোতায়েন করা হয়েছে। তল্লাশি চৌকি বাড়ানো হয়েছে এবং জনসমাগমের ওপর কড়া বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার রায় ঘোষণার দিনটিকে কেন্দ্র করে নানা জল্পনাকল্পনা শুরু হয়েছে। প্রতিবেশী দেশের গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের প্রচার চলছে। সেসব মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার লকডাউন কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। আগামী রবি ও সোমবার শাটডাউন কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছে বলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এরপর ওই দিনই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫-এর গেজেট প্রকাশ করে সরকার। প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট, যেখানে নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে সেই উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ অনুমোদন লাগবে।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে ‘পক্ষপাতদুষ্টতা’ রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতসহ আট দলের কর্মসূচি চলমান রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিতে দেশবাসী একটি আতঙ্কের দিন পার করেছে। বিভিন্ন স্থানে বাস, মহাসড়ক, রেলপথ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগানোর পাশাপাশি গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক-মহাসড়ক-রেলপথ অবরোধে পরিবহনব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ভয়ে বেশির ভাগ যাত্রী পরিবহনে যাতায়াত করেননি। যাত্রীর অভাবে দূরপাল্লার বাস চলাচল দেশের প্রায় ৩০০ রুটেই ছিল একেবারে সীমিত।
বৃহস্পতিবার ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার পাঁচটি স্থানে গাছের গুঁড়ি ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ চলে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা লাঠিসোঁটা, রামদা, ঢাল ও সড়কি হাতে নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেন। এতে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার যান চলাচল বন্ধ থাকে। পদ্মা সেতু এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। দেশের আরো বেশ কিছু স্থানে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের খবর পাওয়া যায়।
রাজধানীর অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল অঘোষিত ছুটি। বিশেষ করে স্কুলবাসগুলো চলেনি। এ ছাড়া অভিভাবকদের অনেকে আতঙ্কে সন্তানদের স্কুলে পাঠাননি। অনেক প্রতিষ্ঠান সরাসরি ক্লাসের বদলে অনলাইনে ক্লাস নিয়েছে।
গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেললাইনে আগুন দেওয়া হয়েছে। আশুলিয়ায় পিকআপ ভ্যানে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। মানিকগঞ্জে বাসে আগুন দেওয়ায় ঘুমন্ত চালক দগ্ধ হয়েছেন। পটুয়াখালী ও বরগুনায় জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। বরগুনায় একটি বাসেও আগুন দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর মিরপুরে একটি বাসেও আগুন দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, হাসিনার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে আওয়ামী লীগ। এতে মানুষও স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কিত। বিশেষ করে যানবাহনে চলাচল, সন্তানকে স্কুলের পাঠানোর ব্যাপারে মানুষ বেশি সতর্ক। ফলে আগামী রবি ও সোমবার ঘিরে মানুষের মনে উদ্বেগ রয়েছে। অফিস, কলকারখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এর প্রভাব পড়তে পারে। দেশে নতুন করে কোনো অরাজকতা সৃষ্টি হয় কি না, তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন সাধারণ মানুষ।
গত বৃহস্পতিবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘আগুনে মানুষ পোড়ানোর এসব কালচার যে আওয়ামী লীগের, সেটার আবার আমরা প্রমাণ পাচ্ছি এখন। তখন তো রাষ্ট্র ক্ষমতাকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে তারা অপপ্রচার চালিয়ে গেছে, কিন্তু ওরাই যে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, তার প্রমাণ এখন বিভিন্ন বাসে আগুন দেওয়া। ’
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘যারা গুপ্তঘাতক, যারা দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় জনগণের টাকা লুট করে, নিজের এলাকায় যারা একেকটা সাদ্দাদের বেহেশত তৈরি করেছে, তাদের তো জনগণের প্রতি কোনো দরদ থাকবে না। ওই সময় লুটের যে আনন্দ, ভোগের যে আনন্দ, বিলাসের যে আনন্দ, এই ভোগ-বিলাসের আনন্দের কথা শেখ হাসিনা ভুলতে পারছেন না। আওয়ামী নেতারা ভুলতে পারছেন না। এ কারণে তাঁরা অবৈধ সন্ত্রাসী পন্থা অবলম্বন করে একেবারে চোরাগোপ্তাভাবে জনগণের ওপর আক্রমণ করছে। তার নমুনা আজ দুই-তিন দিন ধরে আমরা দেখছি। ’
গতকাল এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘আমার তো মনে হয় আওয়ামী লীগের লকডাউনের সঙ্গে, অগ্নিসংযোগের সঙ্গে যারা নির্বাচন চায় না তারাও জড়িত হয়ে যেতে পারে। সামনে রায়ের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগ তো কর্মসূচি দেবে, দিতে পারে। তখন তাদের সঙ্গে কোনো একটি মহল দেশের ভেতর নতুন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। ’
সূত্র : কালের কণ্ঠ।