শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:০২ অপরাহ্ন
বিএনপির সাবেক মহাসচিব প্রয়াত খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পরিবারকে জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তরা নিজেদের স্থানীয় যুবদল নেতাকর্মী বলে পরিচয় দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, চাঁদাবাজরা তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করেন। পরে ভয় পেয়ে ভুক্তভোগীরা মগবাজারের একটি বুথ থেকে ৮০ হাজার টাকা তুলে দেন এবং আরও ২০ হাজার টাকার একটি চেকে সই করতে বাধ্য হন।
গত শুক্রবার (৩ অক্টোবর) রাতে হাতিরঝিল থানার নয়াটোলা গ্রীনওয়ে এলাকার একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে। পরদিন ৪ অক্টোবর হাতিরঝিল থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পুত্রবধূ তানজিন হামিদ মিতুল।
থানায় দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শুক্রবার রাতে কথিত যুবদলকর্মী শাওন (২৫), হাবিব (৩৫), সাজিদ (২২) ও সানি (৩৫) হাতিরঝিল থানার নয়াটোলা গ্রীনওয়ে এলাকার একটি ফ্ল্যাটে গিয়ে চাঁদা দাবি করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযোগকারী তানজিন হামিদ মিতুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুক্রবার রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে আমার বড় বোন শারমিন ওয়াদুদ নিপা ফোন করে জানান, তার জরুরি ভিত্তিতে এক লাখ টাকা প্রয়োজন। রাত ১১টা ২০ মিনিটে আমি তার বাসায় গেলে দেখি, চার যুবক সেখানে উপস্থিত। তখন আমি জানতে চাই তারা কেন সেখানে এসেছে। চাঁদাবাজ শাওন কোমরে থাকা দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে আমাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। তারা আমার বড় বোনের কাছ থেকে এক লাখ টাকা দাবি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তখন আমি বলি, তুমি চেনো আমাদের? আমরা কারা? উল্টো তারা আমাদের বলে, ‘আপনি বুঝতেছেন না? এখন সময়টা কী? আর কেন আসছি আমরা?’ মরহুম ডাবলু (খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে) ও খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের পরিচয় দেওয়ার পরও তারা আরও খারাপ আচরণ করতে থাকে।’
তানজিন হামিদ মিতুল জানান, তারা ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইল কেড়ে নেয়। কাউকে ফোন করতেও দেয়নি। বাচ্চাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে থাকে। বাসায় নগদ টাকা নেই বলার পর তারা বুথ থেকে টাকা তুলে দিতে বলে। ভয়ে আমি রাত ১১টা ৫৭ মিনিটে মগবাজার সিটি ব্যাংকের বুথ থেকে ৮০ হাজার টাকা তুলে সানিকে দিই এবং আরও ২০ হাজার টাকার একটি চেক (চেক নং ৪১০৩১৭৩) দিই।
তিনি বলেন, পরের দিন শনিবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে তারা আবারও আমার বড় বোনের বাসায় আসে এবং ফ্ল্যাট খালি করার জন্য হুমকি দেয়। তারা বলে, আগামী মাসের মধ্যে ফ্ল্যাট খালি না করলে আমার বোন ও তার সন্তানদের হত্যা করা হবে।
জানতে চাইলে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাজু জাগো নিউজকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত চলছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্ত করাসহ রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে।’
খন্দকার দেলোয়ার হোসেন বিএনপির ষষ্ঠ মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা-১ ও মানিকগঞ্জ-১ (ঘিওর-দৌলতপুর) আসন থেকে মোট পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ভাষা আন্দোলনে ভূমিকার জন্য ২০০৫ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। একই সঙ্গে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে তিনি সরকারদলীয় এবং সপ্তম সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাবের সভাপতিও ছিলেন দীর্ঘদিন। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৭ দলের লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন।
২০১১ সালের ১৬ মার্চ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বিএনপির এই বর্ষীয়ান নেতা।