বুধবার, ০৯ Jul ২০২৫, ১০:০০ অপরাহ্ন
টানা বৃষ্টি ও উজানের পানিতে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৫ স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে সীমান্তবর্তী ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারও মানুষ। স্রোতের কারণে ফেনী-পরশুরাম সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে ব্যাহত হচ্ছে যানচলাচল।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানিয়েছে, মুহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরামের জঙ্গলঘোনায় দুটি, অলকায় তিনটি, শালধর এলাকায় একটি, ফুলগাজী উপজেলার উত্তর শ্রীপুর এলাকায় একটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সিলোনিয়া নদীর পরশুরামের গদানগর এলাকায় একটি ও ফুলগাজীর দেড়পাড়া এলাকার দুই স্থানে ভেঙেছে। এছাড়া কহুয়া নদীর পরশুরাম উপজেলার সাতকুচিয়ায় দুটি, বেড়াবাড়িয়ায় একটি ও ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুর এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের এক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে এসব স্থানে ভাঙন দেখা দেয়।
এদিকে মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় ১৫ স্থানে ভেঙেছে। এতে দুর্যোগের কবলে পড়েছে হাজারও মানুষ। মঙ্গলবার রাতে ১৩১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এগুলোতে ১১৫ পরিবারের ৩৪৭ জন আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে রান্না করা ও শুকনো খাওয়ার বিতরণ করছে প্রশাসন।
অপরদিকে পানির স্রোতের কারণে ফেনী-পরশুরাম সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ফুলগাজীর বাসিন্দা আব্দুল হক বলেন, বৃষ্টির সঙ্গে নদীর পানি কিছুটা কমছে। ভাঙন দিয়ে এখনো পানি ঢুকছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। গেল বছরের বন্যার মতো এবারও মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা নিয়ে ভুগতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।
পরশুরামের তুলাতলী এলাকার বাসিন্দা শহীদ উল্লাহ বলেন, সন্ধ্যা থেকে পানি বাড়তে শুরু করে। এখন চারদিকে থৈ থৈ পানি। বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এখনো বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, লোকালয়ে পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। আমরা দুর্গতদের পাশে থেকে কাজ করছি।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, টানা তিন দিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বুধবার (৯ জুলাই) সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তবে মঙ্গলবারের তুলনায় বৃষ্টিপাত কমেছে। বৃহস্পতিবারও জেলাজুড়ে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, সকাল পর্যন্ত ১৫ স্থানে ভাঙনের তথ্য পেয়েছি। এই বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে মধ্যরাত থেকে পানি কিছুটা কমেছে।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, মুহুরী ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। দুর্যোগকবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভবনকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার প্রস্তুত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে জেলা প্রশাসন টিম সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে