সোমবার, ০৭ Jul ২০২৫, ০২:১৪ পূর্বাহ্ন
ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলের বড় ধরনের বিমান হামলার পর বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই অভিযানে ইরান দাবি করেছে, তাদের একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি আবাসিক এলাকায়ও হামলা চালানো হয়েছে, যাতে আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন—এদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এই ঘটনায় ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরায়েলকে ‘কঠোর শাস্তি’র হুমকি দিয়েছেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, প্রয়োজন হলে অভিযান আরও চলবে।
এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তা নিচে তুলে ধরা হলো:
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে কোনো ধরনের সামরিক উত্তেজনা তিনি সমর্থন করেন না। বিশেষভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি ।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তারা এই ঘটনার ‘গভীর পরিণতি’ নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং পরিস্থিতির ওপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে উত্তেজনা বৃদ্ধির পথ পরিহার করতে হবে। চীন জানিয়েছে, তারা সংকট নিরসনে গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে প্রস্তুত।
তুরস্ক ইসরায়েলের হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন ও কূটনৈতিক পথকে অস্বীকার’ বলে অভিহিত করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এ ধরনের হামলা প্রমাণ করে, ইসরায়েল শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় না।
পারমাণবিক আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী দেশ ওমান এই হামলাকে ‘বিপজ্জনক ও বেপরোয়া উত্তেজনা’ বলে অভিহিত করেছে। ‘ইসরায়েল অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলছে,’— বলা হয়েছে ওমানের বিবৃতিতে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, ইসরায়েল আত্মরক্ষার স্বার্থে একতরফাভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এই হামলায় জড়িত নয়। তবে তিনি ইরানকে হুঁশিয়ার করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনা বা স্বার্থকে লক্ষ্যবস্তু বানালে ফল ভালো হবে না।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা এখন অগ্রাধিকার। উত্তেজনা প্রশমন জরুরি।
ফ্রান্স সব পক্ষকে ‘উত্তেজনা না বাড়ানোর আহ্বান’ জানিয়েছে, যদিও ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করেছে। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
সৌদি আরব এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এই বর্বর আক্রমণ ইরানের সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
কাতার হামলাকে ‘ভয়াবহ উসকানি’ এবং আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ করতে হবে।
আমিরাতও হামলার নিন্দা জানিয়ে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে। ‘কূটনৈতিক পথের চেয়ে সামরিক পথ বিপজ্জনক,’ — বলা হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং বলেন, এই সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অস্থির করে তুলছে। আমরা সংলাপ ও কূটনৈতিক সমাধানকে উৎসাহ দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাকসন ইসরায়েলের হামলাকে ‘অপ্রত্যাশিত ও অপ্রয়োজনীয় উসকানি’ বলেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়াইয়া বলেন, আলোচনার সময় এমন সামরিক হামলা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলবে।
সূত্র: আল-জাজিরা
কেএএ/