বৃহস্পতিবার, ০৩ Jul ২০২৫, ০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :

আমাদের আবেগের কি কোনো মূল্য নেই: শহীদ ইয়ামিনের বাবা

‘ধন্যবাদ, আমরা তাহলে প্রেস ব্রিফিংটি সমাপ্ত করছি’। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদ্য পদত্যাগী প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর মাহবুবুর রহমান এ কথা শেষ করার মুহূর্তে ডায়াসের পেছন থেকে একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ভদ্রলোককে বলতে শোনা যায়, ‘ভাই একটা কথা আছে। আমি শহীদ ইয়ামিনের বাবা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এখানে যে সিইও নিয়োগ করা হয়েছে, উনি কোনো শহীদ পরিবারের সদস্য না। আমরা শহীদ ফ্যামিলি কেউ সমর্থন করি না। আর এখানে আরেকটা বেয়াদব আছে, ওয়াকার, সে শহীদ ফ্যামিলিকে ননসেন্স বলেছে। ফাউন্ডেশনের শীর্ষপদে যদি শহীদ পরিবারের সদস্যরা না থাকে তাহলে ফাউন্ডেশন কাদের জন্য?’

এ সময় মিডিয়াকর্মীরা নড়েচড়ে বসেন। তারা শহিদ ইয়ামিনের বাবার কোনো কথা থাকলে ডায়াসে বসে গণমাধ্যমকে অবহিত করার পরামর্শ দেন।

এ সময় তিনি ডায়াসে বসে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমার ছেলে ফেসবুকে কোনো পোস্ট দিয়ে শহীদ হয়নি। আমার ছেলে কোনো আন্দোলনকারীকে পানি খাওয়াতে গিয়ে শহীদ হয়নি। আমার ছেলে কোথাও পুলিশের সামনে বুক পেতে দিয়ে শহীদ হয়নি। আমার ছেলে সাধারণ জনগণ-ছাত্রদের যখন পুলিশের এপিসি থেকে গুলি করা হচ্ছিল তখন সে পুলিশের গুলি থেকে ছাত্র-জনতাকে বাঁচানোর জন্য এপিসির উপরে উঠে যায় এবং ঢাকনা ওঠাতে যায়। এ সময় পুলিশ এপিসি থেকে নিচে নেমে তার বুকের বাম পাশে ক্লোজ ডিসটেন্স থেকে শটগান দিয়ে গুলি করে। তারপর সে যখন এপিসির উপরে পড়ে যায় তখন তারা অন্যদিকে প্রদক্ষিণ করে। এটা আমার ধারণা যে বিশ্বের সবাই দেখেছে যে কী অমানবিকতা করা হয়েছে। আর ফাউন্ডেশনের আজকের বৈঠকে একজন আমাকে বলে সো হোয়াট।’

তিনি বলেন, আমরা বলেছি জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে শহীদ ফ্যামিলির বাইরে কেউ থাকতে পারবে না। স্নিগ্ধ যে সিইও ছিল, সে শহীদ পরিবারের সন্তান ছিল। আমাদের কারও সঙ্গে আলোচনা না করে আমাদের জেনারেল মেম্বার হিসেবে রাখা হয়েছে, আর আমাদেরকে ডেকে এনে বলা হয়েছে সিইও পদত্যাগ করেছে, আমরা নতুন একজন সিইও দিয়েছি।’

 

‘ওনার সঙ্গে শহীদ পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই। ওনার শহীদ পরিবারের প্রতি যদি কোনো আবেগ না থাকে, দরদ না থাকে, ওনার কাছে গিয়ে আমরা কী বলবো? তাহলে কি আমাদের সন্তানরা শহীদ হয়েছে এ কারণে।’

শহিদ ইয়ামিনের বাবা বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছে সিইও হিসেবে কোয়ালিফাইড লোককে বসানো হয়েছে। আমরা কি কম কোয়ালিফাইড? আমি বলেছি আমি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। ২২ বছর ব্যাংকে চাকরি করেছি। ২০১৭ সালে যমুনা ব্যাংক থেকে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টের পথ থেকে পদত্যাগ করেছি। আমি কি সিইও’র জন্য কোয়ালিফাইড না? কোাথা থেকে কাকে ধরে এনে সিইও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাকে কেন আমার মেনে নিতে হবে? এ কথা যখন বলা হয়েছে তখন ওয়াকার সাহেব (ফাউন্ডেশনের কোষাধ্যক্ষ) এটা আপত্তি করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আবেগের কি কোনো মূল্য নেই? আমরা বলেছি, এর আগেও সিইও শহীদ পরিবার থেকে ছিল, এখনো শহীদ পরিবারের মধ্যে থেকে দিতে হবে, যোগ্যতর লোক আছে, আপনারা তাদের বসান।’

‘ওনারা বলছেন চেঞ্জ হবে না, ফাউন্ডেশনের সংবিধান পড়েছেন? আমি বলেছি বাংলাদেশের সংবিধান যেখানে আমাদের ছেলেদের রক্তের বিনিময়ে চেঞ্জ করতে যাচ্ছি, সেখানে প্রয়োজনে ফাউন্ডেশনের সংবিধান চেঞ্জ করা হবে। আমরা যখন সাধারণ সদস্য হিসেবে যখন ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলি তখন তাদের সহযোগিতা পাই না।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘গণঅভ্যত্থানে যারা আহত তাদের ফাউন্ডেশনে চাকরি দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তারা চাকরি পায়নি। অধিকাংশ কর্মচারী আহতও না, শহীদ ফ্যামিলির কেউ না।’

এ সময় শহীদ ইয়ামিনের বাবা কোষাধ্যক্ষ থেকে ওয়াকারের পদত্যাগ দাবি করেন। তিনি শহীদ পরিবারের সদস্যদের সো হোয়াট, ননসেন্স বলতে পারেন না বলে জানান মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।

আজ ৮ মে সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের চতুর্থ বোর্ড সভা ফাউন্ডেশন এর সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

আজ (৮ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে চতুর্থ বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভা শেষে রাত সাড়ে ৮টার দিকে জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে যমুনার বাইরে প্রেস ব্রিফিং করা হয়। ব্রিফিংয়ের শুরুতেই জুলাই ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ জানান, তিনি সিইও’র পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ মুহূর্তে রাজনীতিতে নামার কোনো পরিকল্পনা তার নেই। পড়াশোনার জন্য তিনি গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।

জুলাই ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ১০১ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে বলে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024