বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
সরকারের পছন্দের ব্যক্তিদের রাজস্ব ফাঁকি রোধে এনবিআর বিলুপ্ত হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে বিশ্বের সব নিষ্ঠুরতা ছাড়িয়ে গেছেন হাসিনা: প্রধান উপদেষ্টা অর্থনীতির সবখানেই জিয়াউর রহমানের স্পর্শ রয়েছে: রিজভী মাসউদের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপির লজ্জিত হওয়া উচিত: সারজিস আলম হান্নান মাসউদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় এনসিপির বিক্ষোভ ঈদের কেনাকাটা নিরাপত্তা শঙ্কায় মধ্যরাতে ক্রেতা কম স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা তামিমের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছে পরিবার ও বিসিবি ইতেকাফের সময় প্রয়োজনীয় বেচাকেনা করা যাবে?

ঈদের পরেই আসছে এনসিপির ‘রাজনৈতিক এজেন্ডা’

• আওয়ামী লীগের বিচার ও জুলাই সনদ প্রকাশের দাবিতে অগ্রাধিকার
• গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে জনমত দেখানোর চেষ্টা, আন্দোলনে নামা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা
• প্রয়োজনে রাজনৈতিক এজেন্ডায় থাকবে সংবিধান সংস্কারের বিষয়
• ৩০০ আসনেই এমপি প্রার্থী, জেলা-উপজেলা কমিটি শিগগির

কোটা আন্দোলন দিয়ে শুরু। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত। বড় সাফল্যের পর রাজপথই বেছে নিয়েছে তরুণ ছাত্ররা। সম্প্রতি তারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। এবার শোনা যাচ্ছে ঈদের পরই আসছে তাদের ‘রাজনৈতিক এজেন্ডা’।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আত্মপ্রকাশ ঘটে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির। দলটির হাল ধরেছেন জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের মধ্যে অন্যতম সংগঠক মো. নাহিদ ইসলাম। ঐদিন ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।

আওয়ামী লীগের বিচার ও জুলাই সনদ প্রকাশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই করতে হবে। জুলাই সনদ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু সুপারিশের সঙ্গে অনেকেই একমত। –এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন

দলটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সংবিধান সংস্কার করে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে জোরালো বক্তব্য দেন দলের শীর্ষ দুই নেতা। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা মনে করি জুলাই ২০২৪ গণঅভ্যুত্থান আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার লড়াই সূচনা করেছে। একটি গণতান্ত্রিক নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে আমাদের সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সব সম্ভাবনার অবসান ঘটাতে হবে। সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠার জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন আমাদের অন্যতম প্রাথমিক লক্ষ্য।নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিকে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষায় শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ভেঙে পড়া রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় গড়ে তোলা ও তাদের গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষা করা হবে আমাদের রাজনীতির অগ্রাধিকার। এর মধ্য দিয়েই কেবল আমরা একটি পরিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হতে পারবো। আমরা এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ চাই যেখানে সমাজে ও রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বিভেদের বদলে ঐক্য, প্রতিশোধের বদলে ন্যায়বিচার এবং পরিবারতন্ত্রের বদলে মেধা ও যোগ্যতার মানদণ্ড প্রতিষ্ঠিত হবে। আমাদের রাজনীতিতে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কোনো স্থান হবে না।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আপনারা দোয়া করবেন বাংলাদেশের তরুণ সমাজ আজকে যে দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে মহান রাব্বুল আলামিন যেন আমাদের সেই দায়িত্ব পালনে তৌফিক দান করেন।

তিনি বলেন, তরুণরা স্বপ্ন দেখে আগামী বাংলাদেশ নতুন এক সংবিধানের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। সেই স্বপ্ন নিয়ে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানান তিনি।

আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবো। দলটা তরুণ নেতৃত্বে হবে। বড় বড় দলের অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী আবার আমাদের চিন্তা-চেতনার সঙ্গে মিল রয়েছে। আমরা তাদের মূল্যায়ন করবো। –এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন

এই দুই শীর্ষ নেতার বক্তব্য স্পষ্ট বার্তা দেয় যে দেশের বিদ্যমান সংবিধান সংস্কারের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন চায় তারা। তবে এনসিপির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কার্যক্রম, সরকারের কাছে দাবি, জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোসহ বেশ কিছু কর্মপরিকল্পনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

 

শুরুর দিকে সংবিধান বাতিল করে গণপরিষদ নির্বাচনের জন্য জোরালো দাবি থাকলেও আপাতত জুলাই গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার এবং জুলাই প্রক্লেমেশন বা জুলাই সনদ প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে দলটি। এরপর গণপরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে জোরালো দাবি তুলবে তারা।এনসিপির একটি পক্ষ মনে করছে, জুলাইয়ের স্প্রিরিটকে কাজে লাগিয়ে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তোলা এবং বাস্তবায়নের এখনি মোক্ষম সময়।

সম্প্রতি এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক সঙ্গে হতে পারে। এর মাধ্যমেই নতুন কাঠামো ও নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রকৃত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণে সহায়তা করবে।

গণপরিষদ নির্বাচন ছাড়া সংবিধান পরিবর্তন সম্ভব নয়। নতুন করে সংবিধান পুনঃলিখনের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন দরকার। না হলে রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তন ঘটবে না। –এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন

তার এমন বক্তব্যের পরই গত ৮ মার্চ এক সঙ্গে গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন ইস্যুতে কোনো ধরনের জাতীয় ঐক্য হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

এতে এনসিপির একটি পক্ষ মনে করছে, অভ্যুত্থান পরবর্তী এই সময়ে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির সঙ্গে কোন্দলে যাওয়া ঠিক হবে না। বরং সরকার গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি না মানলে সেটি রাজনৈতিক এজেন্ডার মধ্যেই প্রকাশ করা ভালো। তবে দলটি এই দাবিতে ঠিক কী করবে সে বিষয়টি এখনও সুরহা হয়নি।

এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, ঈদের পরেই দলটির সাংগঠনিক গতিশীলতা বাড়ানো হবে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠিত হবে। এর আগে দলটির সদস্য অন্তর্ভুক্তির কাজ শুরু হবে। অফলাইন ও অনলাইন দুইভাবে চলবে সদস্য সংগ্রহের কার্যক্রম।

দলটি ঈদের পরেই ‘রাজনৈতিক এজেন্ডা’ প্রকাশ করবে। এতে ৩০ থেকে ৪০টি দফা থাকতে পারে। এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নাগরিক অধিকার, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ থাকবে। যাতে এনসিপি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে দেশের কী ধরনের পরিবর্তন আনবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকে। এরই মধ্যে রাজনৈতিক এজেন্ডা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে। এজেন্ডা তৈরিতে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম তদারকি করছেন।

এনসিপির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা ভাবছে এনসিপি। দলটিতে তারুণ্যের অগ্রাধিকার থাকলেও মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্র সাংগঠনিক দক্ষতা, জনপ্রিয়তাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। দলটিতে যোগ দেওয়ার জন্য অনেকেই যোগাযোগ করছেন। তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ঈদের পরে সাংগঠনিক গতিশীলতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটির আকার বাড়ানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিচার এবং জুলাই সনদ প্রকাশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই করতে হবে। জুলাই সনদ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সব দলের কাছে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু সুপারিশের সঙ্গে অনেকেই একমত।’

নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু নির্বাচনের জন্য অভ্যুত্থান হয়নি। কিছু বিষয়ে বিএনপির বিরোধীতা দেখতে পাচ্ছি। তবে আমরা বিশ্বাস করি সব রাজনৈতিক দলের ইচ্ছাতেই সংস্কার হবে।’

গণপরিষদ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি না হলে এনসিপি কী করবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরা শারমিন বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার তো করতেই হবে। এখন সম্ভব না হলে আমাদের রাজনৈতিক এজেন্ডায় থাকবে। আমরা ঈদের পরই রাজনৈতিক এজেন্ডা প্রকাশ করবো।’

নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে এনসিপির এই যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবো। আমরা বলেছি দলটা তরুণ নেতৃত্বে হবে। অনেক বড় বড় দলের অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তারা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী, আবার আমাদের চিন্তা-চেতনার সঙ্গে মিল রয়েছে। আমরা তাদের মূল্যায়ন করবো।’

মনিরা শারমিন বলেন, দলের সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম শিগগির শুরু হবে। জাতীয় নাগরিক কমিটিতে যুক্ত হওয়ার সময় অনেকেই পলিটিক্যাল মোটিভেশন নিয়ে যুক্ত হয়েছিলেন। এখন তাদের অনেকেই এনসিপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাবেন। শিগগির জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন হবে।

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘গণপরিষদ নির্বাচন ছাড়া সংবিধান পরিবর্তন সম্ভব নয়। নতুন করে সংবিধান পুনঃলিখনের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন দরকার। না হলে রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তন ঘটবে না। যেহেতু সংবিধান পরিবর্তন সাধারণ মানুষের দাবি, তাই আমরা এই দাবি জানিয়েছি।’অন্য রাজনৈতিক দল গণপরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে একমত হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে সামান্তা শারমিন বলেন, ‘নানামুখী কথাবার্তা আসছে। মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমরা তুলে ধরেছি। অন্য কোনো পক্ষের যদি সাধারণ মানুষকে নিয়ে বোঝাপোড়া না থাকে তবু আমরা আমাদের দাবি নিয়ে সোচ্চার থাকবো। ’দাবি না মানলে রাজপথে আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়ে এই নেত্রী বলেন, ‘আমরা দাবি-দাওয়া পদ্ধতিগতভাবে আদায় করতে চাইবো। সরকারের কাছে তুলে ধরবো। সেটা না হলে আমরা যেহেতু রাজনৈতিক দল, আমাদের রাজপথে নামতেই হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024