বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:০২ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
হাসনাত-সারজিসসহ কক্সবাজার যাওয়া এনসিপির ৫ নেতাকে শোকজ নির্বাচনের প্রস্তুতি- ভোটের দিন কেন্দ্রে যাবে ব্যালট, বডি ক্যামেরায় করা হবে নজরদারি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসি চট্টগ্রামে শিবিরের ‘জুলাই জাগরণ নবউদ্যমে বিনির্মাণ’ র‍্যালি দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ-ঘোষণাপত্র নিয়ে এনসিপির সংবাদ সম্মেলন জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে জামায়াতের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দুপুরে হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলার ৮০ বছর পূর্তি কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস উদযাপন শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার দাবিতে বাড্ডায় সড়ক অবরোধ ১০ দিনে প্রাথমিক নিবন্ধন করলেন ২৫ হজযাত্রী

নির্বাচনের প্রস্তুতি- ভোটের দিন কেন্দ্রে যাবে ব্যালট, বডি ক্যামেরায় করা হবে নজরদারি

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘রাতের ভোট’ ঠেকাতে ভোটগ্রহণের দিন সকালে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম ভোটকেন্দ্রে পাঠাবে সরকার। তবে এসব দ্রব্যাদি আগের দিনই নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে জেলা, উপজেলা ও বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া হবে। এছাড়া, ভোটের দিন সব কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বডিওর্ন ক্যামেরা পরা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

গত ৯ জুলাই যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাচন প্রস্তুতি ও সংস্কার সংক্রান্ত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়।

ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে।প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন যে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগের দিন বিভিন্ন কেন্দ্রে ব্যালট পৌঁছানোর পর রাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। এমন পরিস্থিতি ঠেকাতে নির্বাচন সংস্কার কমিশন ভোটের দিন সকালেই ব্যালট পাঠানোর সুপারিশ করেছে।

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, নির্বাচনকালীন সময় ১৫ দিন নির্দিষ্ট রুটে চলা যানবাহন ছাড়া অন্যান্য সব ধরনের যানবাহন—যেমন ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, পিকআপ, ট্রাক, লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এছাড়া, সারা দেশে নির্বাচনের সময় নির্বাচনী এলাকায় সাতদিন মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।

আসন্ন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে দ্রুত ১৯ হাজার ২৯২ সদস্য নিয়োগের সিদ্ধান্তও দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগ শেষ করে নির্বাচনী দায়িত্বভিত্তিক প্রশিক্ষণ শুরু করে ডিসেম্বরের মধ্যে তা শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

একইসঙ্গে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে এবং পরবর্তী মাসগুলোতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।এছাড়া, প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসিদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাই করে বদলির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নির্বাচনকে নিরপেক্ষ, প্রভাবমুক্ত ও গ্রহণযোগ্য করতে এসব পদে লটারিভিত্তিক বদলি করা সম্ভব কিনা, তা বিবেচনার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশে ১১ হাজার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) ৫ হাজার ৫১৩ জন, কোস্টগার্ডে ৬৩৪ জন এবং আনসারে ২ হাজার ১৪৫ জন সদস্য নিয়োগ দিতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে।

এ লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা ২৫টি সিদ্ধান্ত দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রস্তুতি প্রক্রিয়া শুরু করেছে।নির্বাচন সংক্রান্ত প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য গত ৩ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের চিঠি পাঠিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণি। চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া সিদ্ধান্তগুলো জরুরি ভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদারকেও চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম কেনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নামে বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৮০ কোটি টাকা। এছাড়া অপ্রত্যাশিত ব্যয়ের খাতে আরও ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে অর্থ মন্ত্রণালয় কী ধরনের সহযোগিতা করতে পারে, সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনের অর্থ বরাদ্দ দিতে কোনো কার্পণ্য করবে না সরকার।

জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ৮ লাখ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে পুলিশ সদস্য ১ লাখ ৪১ হাজার, অঙ্গীভূত ও সাধারণ আনসার (অস্ত্রসহ) ৪৭ হাজার, অস্ত্র ও লাঠিসহ আনসার-ভিডিপি ৪৭ হাজার, লাঠিসহ আনসার-ভিডিপি ৪৭ হাজার এবং গ্রাম পুলিশ ও দফাদার ৯৪ হাজার জন।

এছাড়া, নির্বাচনে ৬০ হাজার সেনা সদস্য মোতায়েন থাকবে বলে গত ২৮ জুলাই সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, নির্বাচনী এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক রিটার্নিং অফিসার তার আওতাধীন এলাকায় একটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা সেল গঠন করবেন। তিনি জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ের নিরাপত্তা কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে একটি বিস্তারিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরি করবেন এবং নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করবেন।

স্ট্রাইকিং ফোর্স ও অন্যান্য বাহিনী নিয়োগে জেলা পুলিশ সুপার বা মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ কমিশনার রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে সমন্বয় করবেন। প্রয়োজনে ‘ইন এইড টু দ্য সিভিল পাওয়ার’ অনুযায়ী সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনী মোতায়েন ও দায়িত্ব নির্ধারণ করা হবে।

কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচনে অনিয়ম রোধে জনসাধারণ ও দায়িত্বরতদের জন্য নির্দেশিকা (ম্যানুয়াল) তৈরি করে সরবরাহ করা হবে। নির্বাচনে দায়িত্বরতদের দ্বারা অনিয়ম ও অপরাধ সংঘটিত হলে তাৎক্ষণিক বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং দোষী প্রমাণিত হলে ডোসিয়ারে তা সংরক্ষণ করতে হবে।

১৮-৩৩ বছর বয়সী তরুণ ভোটারদের জন্য আলাদা বুথ ও সহায়ক ব্যবস্থা রাখতে এবং নারী ভোটারদের জন্য আলাদা বুথের ব্যবস্থা করতে ইসিকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা যেন নির্বাচনকালে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও প্রভাবমুক্তভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, প্রতিটি জেলায় ও নির্বাচনী এলাকায় বিচারিক ক্ষমতাসম্পন্ন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে মোবাইল কোর্ট টিম গঠন করা হবে। তারা ভোটের দিন ও তার আগে-পরে সংঘটিত সহিংসতা এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন নিয়ন্ত্রণে মাঠে থাকবেন।

রিটার্নিং অফিসারের চাহিদা অনুযায়ী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে মোবাইল বা স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করবে। এসব ম্যাজিস্ট্রেটদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হবে।

নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরবর্তী ১৫ দিন বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সধারীরা যাতে অস্ত্র বহন বা প্রদর্শন না করতে পারে, সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। একইসঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী স্থানীয় প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী সারা দেশে অবৈধ অস্ত্র, বিস্ফোরক ও সহিংসতা সংশ্লিষ্ট সামগ্রী উদ্ধারে টার্গেটেড অভিযান পরিচালনা করবে।

সূত্র : দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024