বৃহস্পতিবার, ০৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:১৯ পূর্বাহ্ন
দেশের কিছু মানুষ ও চিহ্নিত রাজনৈতিক দল ছাড়া সবাই জুলাই মুক্তিযোদ্ধা। তাই এ বিষয়ে কোনো বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ নেই। এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি আরও বলেন, আপনারা যদি আমাদের একবার সুযোগ দেন এবং আমাদের ওপর আস্থা রাখেন, তাহলে আমরা ৫৪ বছরের ইতিহাসই বদলে দেবো। দুর্নীতিবাজদের হয় দুর্নীতি ছাড়তে হবে, নয়তো জেলে যেতে হবে।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল ১০টায় মহাখালী কলেরা হাসপাতালের সামনে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গণমিছিলপূর্ব বিশাল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের পরিচালনায় সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দীন মানিক ও ইয়াছিন আরাফাত, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য জিয়াউল হাসান, জামাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মো. আতাউর রহমান সরকার এবং ঢাকা মহনগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাসির উদ্দীন প্রমুখ।
ডা. তাহের বলেন, বিগত ১৫ বছর আওয়ামী-বাকশালীরা দেশে অপশাসন-দুঃশাসন চালিয়েছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের লজ্জাজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। তারা আবার দৃশ্যপটে ফিরে আসার জন্য নানান ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু বীর জনতা তাদের সে ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হতে দেবে না। যারা নতুন করে স্বৈরাচার হওয়ার চেষ্টা করছেন তাদেরও জনগণ কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
তিনি দেশ ও জাতিকে নিয়ে জামায়াতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, জামায়াত সত্য, ন্যায় ও ইসনাফ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে জামায়াত কারও সঙ্গে আপস করবে না, বরং দেশে টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও তা রক্ষার জনতিনি দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য আগামী নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।তিনি বলেন, গতানুগতিক পদ্ধতির নির্বাচন দেশ ও জাতির জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে প্রায় সব নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনসহ শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনই নির্বাচন ছিল না। এসব নির্বাচনে ব্যাপক ভিত্তিতে রিগিং, গণহারে সিল মারা, কেন্দ্র দখল, ডামি নির্বাচন, ব্যালট ছিনতাই, দিনের ভোট রাতে করাসহ ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূলত এসব ছিল ভুয়া ও নির্বাচনের নামে প্রহসন। তাই দেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি তথা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চালু করতে হবে।
এ পদ্ধতি চালু হলে নির্বাচনী অপরাধ থাকবে না, ভোট চুরি ও কেন্দ্র দখল হবে না। থাকবে না টাকার খেলা। মূলত, যাদের প্রয়োজনীয় জনসমর্থন নেই তারাই এ পদ্ধতির বিরোধিতা করছেন। তারা মাস্তানি ও অর্থের বিনিময়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চান। কিন্তু জনগণ তাদের সে সুযোগ দেবে না। পিআর পদ্ধতি ছাড়া অন্য কোনো পদ্ধতি তারা মেনে নেবে না।
ডা. তাহের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, জনগণের রক্তের ওপর দিয়েই জুলাই বিপ্লব সাধিত হয়েছে। তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়েই আপনি এখন ক্ষমতায়। আপনি বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্য আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হননি। তাই নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।
সংস্কার ছাড়া নির্বাচন ঘোষণা করলে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল হবে। দেশ ও জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলে তারা আপনাকে ছাড়বে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় থাকতে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে।
তিনি অতীতের অপশাসন-দুঃশাসনের কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা বিএনপি-আওয়ামী লীগের শাসনামল দেখেছি। কিন্তু মানুষের মুক্তি মেলেনি। জনগণ তাদের অধিকারের নিশ্চয়তা পায়নি। আপনারা যদি আমাদের একবার সুযোগ দেন এবং আমাদের ওপর আস্থা রাখেন, তাহলে আমরা ৫৪ বছরের ইতিহাসই বদলে দেবো। দুর্নীতিবাজদের হয় দুর্নীতি ছাড়তে হবে, নয়তো জেলে যেতে হবে। আমাদের মন্ত্রী-এমপিরা শুল্কমুক্ত গাড়ি কিনবেন না বা সরকারি প্লট নেবেন না।
ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে ইনসাফ ও ইসলামের বাংলাদেশ। যেখানে সব মানুষের অধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে।
তিনি গণহত্যাকারীদের বিচার এবং পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে নির্বাচন দিতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জুলাই সনদ ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। কিন্তু সে সনদে জনপ্রত্যাশার বাইরে কিছু থাকলে তা দেশপ্রেমী জনতা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। শুধু ঘোষণা নয়, বরং তা নির্বাচনের আগেই পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। নির্বাচন হতে হবে জুলাই সনদের ভিত্তিতেই। নির্বাচনের আগেই গণহত্যার বিচার দৃশ্যমান হতে হবে। চাই প্রয়োজনীয় সংস্কারও। অন্যথায় অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
গণমিছিলটি মহাখালী রেলগেট থেকে শুরু হয়ে মগবাজার চৌরাস্তায় এসে মহানগরী আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক (ঢাকা মহানগরী উত্তর) মো. আতাউর রহমান সরকার প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা গেছে।