বৃহস্পতিবার, ৩১ Jul ২০২৫, ০১:২২ পূর্বাহ্ন

ফ্যাসিস্ট সরকার জনসংখ্যা ও মাথাপিছু আয় নিয়ে প্রতারণা করেছে : আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার জনসংখ্যার সংখ্যা ইচ্ছাকৃতভাবে কম দেখিয়ে মাথাপিছু আয় বাড়িয়ে দেখানোর যে চেষ্টা করেছে, তা শুধু ভ্রান্তিই নয়, বরং দেশের ভবিষ্যতের সঙ্গেও প্রতারণা।

মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমদ চৌধুরী অডিটরিয়ামে সেন্টার ফর পলিসি অ্যানালাইসিস অ্যান্ড রিফর্ম কর্তৃক আয়োজিত ‘তথ্য-চালিত অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ : ২০৩৫ রূপকল্প’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে
বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, বিএনপির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও বিএনপি গঠিত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয় বর্ষপূর্তি পালন কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা ড. মাহদী আমিন ও মি. রেহান এ আসাদ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. এস. এম. জিয়াউদ্দিন হায়দার।

অনুষ্ঠানে কিনোটি স্পিকার ছিলেন অধ্যাপক এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নূরনবী।

অনুষ্ঠানে আমীর খসরু বলেন, বর্তমানে দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় তথ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। আজকের বিশ্বে যার কাছে যত বেশি তথ্য, সে তত বেশি ক্ষমতাবান। অথচ বাংলাদেশে তথ্য নির্ভর নীতি গ্রহণ ও প্রয়োগে এখনও স্পষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। ডেটা-নির্ভর, স্বচ্ছ ও দক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তুলতে না পারলে দেশের উন্নয়ন শুধু কাগজে-কলমেই থাকবে, বাস্তবে নয়।

এজন্য সবচেয়ে জরুরি হলো রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং পেশাদারিত্ব।বর্তমান সময়ে তথ্যকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে দেশের বাস্তবতা আড়াল করা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিবিএসের (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের ডেটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যা একটি দেশের নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ার জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ’

বিএনপি আমলে বড় কোনো দুর্নীতি বা স্ক্যামের ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান।

বিশেষ করে ক্যাপিটাল মার্কেট, ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর এবং ডেটা কালেকশন প্রক্রিয়ায় পেশাদারিত্ব ও স্বচ্ছতা অপরিহার্য। ব্যাংকগুলোতে স্বল্পমেয়াদি আমানতের বিপরীতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়ার যে মিসম্যাচ হয়েছে, তা অর্থনীতির জন্য ভয়ঙ্কর সংকেত। ক্যাপিটাল মার্কেটের বিকাশে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও দলীয়করণ যত কমানো যাবে, তত ভালো। অথচ বিএনপি আমলে বাংলাদেশ ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে পেশাদার লোক নিয়োগ দেওয়ায় বড় কোনো দুর্নীতি বা স্ক্যামের ঘটনা ঘটেনি। ’তিনি বলেন, সরকার, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং বিনিয়োগ খাত-সবখানে ডিজিটালাইজেশন প্রয়োজন।

ঘুষ ও দুর্নীতির উৎস বন্ধ করতে হলে জনগণের সরকারি অফিসে যাওয়া কমাতে হবে। অনলাইন সেবা চালুর মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। উন্নত বিশ্বকে অনুসরণ করেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, দিল্লিতে বসে কিছু মহল বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক শক্তি তৈরির পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপি এসব ষড়যন্ত্র চিহ্নিত করে মাঠপর্যায়ে তথ্যনির্ভর আন্দোলনের মাধ্যমে তার মোকাবিলা করবে।

তিনি বলেন, বিএনপি বহু আগেই সুশাসনের রূপরেখা তৈরি করেছে, যার ভিত্তিতেই ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব এসেছে। দুর্নীতি দমন, জবাবদিহি এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাই আগামী দিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তারেক রহমানের নেতৃত্বে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন বলেন, বাংলাদেশে একটি সাধারণ ঐকমত্য তৈরি হয়েছে যে, সুষ্ঠু নির্বাচন ও জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই একটি বৈধ সরকার গঠন সম্ভব। আমরা যে রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করি, তা বাস্তবায়নের জন্য স্টেকহোল্ডারদের প্রতিনিধিত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে মূল ভিত্তি হবে ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার পরিকল্পনা।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ বি এম ওবাইদুল ইসলাম বলেন, টেকসই উন্নয়ন, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, এমনকি জাতীয় নিরাপত্তার মূল শর্তই হলো গুড গভর্নেন্স ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন। কিন্তু বাংলাদেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, শিক্ষায় বাজেট ঘাটতি এবং রিফর্মের অভাব, সব কিছুর মূলেই রয়েছে সুশাসনের ঘাটতি।

তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ছাড়া জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয় না। তাই আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হলে চাই জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, জুলাইয়ের বিপ্লব থেকে আমরা দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পেয়েছি। একটি হল, বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন সমাজ হিসেবে গড়ে তোলা। অন্যটি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করা। শহীদের এই আত্মত্যাগের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেটি হবে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং উন্নত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আপার-মিডল ইনকাম কান্ট্রিতে উন্নীত হওয়ার পথে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, সেগুলোর মোকাবিলা সম্ভব যদি এসডিজি লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে বিএনপির ৩১ দফাকে সমন্বয় করা যায়। এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই এসডিজি লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024