বুধবার, ০৯ Jul ২০২৫, ০৩:২২ পূর্বাহ্ন

বঙ্গোপসাগরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের আহ্বান বিমসটেকের

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে আঞ্চলিকভাবে সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া টেকসই প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিমসটেক।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) ঢাকায় সংস্থাটির সচিবালয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়িয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করে এই আঞ্চলিক জোট। বিমসটেক কার্যালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বঙ্গোপসাগর ঘিরে থাকা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর আঞ্চলিক জোট বিমসটেক জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগের প্রকোপ দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় বাড়ানোর লক্ষ্যে ‘বঙ্গোপসাগরে মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয়’ শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি যৌথভাবে প্রণয়ন করেছে ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ (আইপিসিএস) এবং সেন্টার ফর হিউমেনিটেরিয়ান ডায়ালগ (এইচডি)।

বিমসটেক জানায়, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত আইপিসিএস-বিমসটেক-এইচডি নীতি বাস্তবায়ন কর্মশালার আলোকে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এতে আঞ্চলিক পর্যায়ে মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি ও সম্ভাবনার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিমসটেক মহাসচিব ইন্দ্র মণি পান্ডে এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মোতালেব সরকার।

বিমসটেক মহাসচিব বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সম্মিলিত পদক্ষেপ ছাড়া কোনো দেশ একা সফল হতে পারবে না। দুর্যোগ সহনশীল অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং আঞ্চলিক প্রস্তুতি বাড়ানোই হবে আমাদের অগ্রাধিকার। এই প্রতিবেদন সঠিক সময়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরেছে এবং এই পরিবর্তনের নেতৃত্বের জন্য বিমসটেককে উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মোতালেব সরকার বলেন, প্রতিবেদনটি এমন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে যখন বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগের ঘনত্ব ও তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের প্রতিক্রিয়া হতে হবে দ্রুত, সমন্বিত এবং যৌথভিত্তিক। বিমসটেকের বর্তমান চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশ এই প্রক্রিয়ায় সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

প্রতিবেদনটিতে বিমসটেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রকে (বিডিএমসি) কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিশেষজ্ঞ সংস্থার সহায়তায় একটি গবেষণাভিত্তিক তথ্যভাণ্ডার তৈরি, আঞ্চলিক দুর্যোগ মানচিত্রায়ন ও প্রতিক্রিয়া কেন্দ্র স্থাপন, দুর্যোগের সময় দ্রুত যোগাযোগের জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি এবং মানবিক সহায়তা সরঞ্জাম সংরক্ষণ ও ব্যয় ভাগাভাগির ব্যবস্থা চালু করা।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানের শেষে অংশগ্রহণকারীরা আঞ্চলিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যৌথ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিমসটেকের অগ্রাধিকার সহযোগিতা খাতগুলোর একটি। সংস্থার বিশেষজ্ঞ গ্রুপ সদস্য দেশগুলোতে দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও সমন্বয় বাড়ানোর জন্য একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করছে।

এরইমধ্যে ভারতের নয়ডায় বিমসটেক সেন্টার ফর ওয়েদার অ্যান্ড ক্লাইমেট স্থাপন করা হয়েছে, যা সদস্য দেশগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় আবহাওয়া ও জলবায়ু পূর্বাভাস সরবরাহ করছে। এই উদ্যোগ বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে কার্যকর ও টেকসই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে আঞ্চলিক সংহতি ও সমন্বয়ের একটি নতুন দিক উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024