মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৪ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ (সা.) ক্লেদাক্ত বিশ্বে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাই জীবনের শুরু থেকেই তিনি ছিলেন সত্যনিষ্ঠ ও শান্তিপ্রিয়। মিথ্যা, প্রবঞ্চনা ও প্রতারণার প্রতি তাঁর ঘৃণা ছিল। অল্প বয়সেই তিনি ‘আল-আমিন’ খেতাবে ভূষিত হয়েছিলেন। প্রাক-ইসলাম যুগে আরবের আকাশবাতাস-মৃত্তিকা যখন দলাদলি, হানাহানি আর রক্তপাতে বিষাক্ত, তখন তিনিই সর্বপ্রথম শান্তির ললিতবাণী নিয়ে এগিয়ে আসেন। হিলফুল ফুজুল বা শান্তিসংঘ গঠন করে তিনি আরবের মাটিতে ভবিষ্যৎ শান্তিক্ষেত্র রচনা করেন। সারা জাহান যখন অত্যাচার-অবিচারে নির্যাতিত-নিষ্পেষিত তখন মহানবী (সা.) দুনিয়ায় এসেছিলেন মজলুম মানুষের ত্রাণকর্তা হিসেবে। মাত্র ২০ বছর সময়ের মধ্যে তিনি সভ্যতাবিবর্জিত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন আরব জাতিকে এক সুসভ্য ধর্মাশ্রিত জাতিতে পরিণত করে তাদের নৈতিক ও আত্মিক পতনের অন্ধকূপ থেকে তৌহিদ, নীতিবোধ ও ন্যায়পরায়ণতার উচ্চতম স্তরে উন্নীত করেছিলেন। সব গোষ্ঠীকলহ দূরীভূত করে গোটা আরব জাতিকে ইমানভিত্তিক ঐক্যের বন্ধনে বেঁধেছিলেন। তাঁর দৃষ্টিতে ও তাঁর প্রণীত আইনের কাছে মুসলিম-অমুসলিম সবাই ছিল সমান। তিনি ছিলেন দরিদ্র, অসহায়, দুর্বল ও মজলুমের বন্ধু। তিনি মানুষের হাসিকান্নার শরিক ছিলেন। শোকার্ত ও দুঃখপীড়িত মানুষকে আন্তরিক সমবেদনা প্রদর্শন করতেন এবং তাদের দুঃখভোগের সঙ্গী হতেন। অভাবের সময় তিনি ক্ষুধার্তকে নিজ খাদ্যের ভাগ প্রদান করতেন এবং প্রতিবেশী প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত সুখস্বাচ্ছন্দ্য আন্তরিকভাবে কামনা করতেন। তিনি দাসী ও অধীন লোকদের প্রতি সর্বাধিক মানবোচিত আচরণ করতেন। তাঁর গোলাম আনাস বলেছেন, আমি ১০ বছর নবী করিম (সা.)-এর গোলামি করেছি; কিন্তু কখনো তিনি আমার প্রতি বিরক্তিসূচক উহ্ শব্দটিও করেননি। মহানবী (সা.)-এর চরিত্রে এতটুকুও প্রতিহিংসাবৃত্তি ছিল না। তিনি দুশমনকেও ক্ষমা ও করুণা প্রদর্শন করে আনন্দ লাভ করতেন। বলতেন, ‘শাস্তি দেওয়ার জন্য আমি আসিনি, শান্তির দূতরূপে এসেছি। ’ এদিক দিয়ে তিনি ছিলেন মানব ইতিহাসে অতুলনীয় এবং সমগ্র দুনিয়ায় অদ্বিতীয়। আত্মার মহত্ত্ব, অন্তরের পবিত্রতা, সুরুচিপূর্ণ মনোভাব ও কঠোর কর্তব্যনিষ্ঠা ছিল মহানবী (সা.)-এর চরিত্রের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। মহানবী (সা.) তাঁর অনুসারীদের সব সময় আগের ও পরের সব ধর্মপ্রচারকের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উপদেশ দিয়ে গেছেন।
লেখক : ইসলামি গবেষক