সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:০৫ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন , সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সরকার অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবে ‘এই বেয়াদব ছেলে, গেট আউট’ — রাকসুর জিএসকে রাবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অতীতের কলঙ্ক মুছতে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই: ইসি আনোয়ারুল জাতীয় ঈদগাহে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সাদেক খানের ১২ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ মুন্সীগঞ্জে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, প্রতিপক্ষের গুলিতে নিহত ১ নতুন রূপে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে: সাইফুল হক তারেক রহমানের নেতৃত্বে জুলাই আন্দোলনে সফলতা এসেছে: মঈন খান দশম গ্রেডসহ তিন দাবি, তৃতীয় দিনের মতো শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষকদের অবস্থান দেশের সব জায়গায় চাঁদাবাজি হচ্ছে: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন

মধ্যরাতে চবি শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সংঘর্ষে আহত ৬০

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) এক ছাত্রীকে দারোয়ান কর্তৃক মারধরের অভিযোগকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে সহকারী প্রক্টরসহ প্রায় ৬০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ২১ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।

শনিবার (৩০ আগস্ট) রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেইট বাজার সংলগ্ন শাহাবুদ্দীন ভবনের গেইটে এ ঘটনার সূত্রপাত হয়।

 

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, দর্শন বিভাগের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী রাত ১১টার দিকে বাসায় ঢুকতে চাইলে দারোয়ান গেইট খুলতে অস্বীকৃতি জানান। পরে বাসার ভেতর থেকে আরও কয়েকজন ছাত্রী চাপ দিলে তিনি গেইট খুললেও ওই ছাত্রীকে জেরা করেন এবং একপর্যায়ে তার গায়ে হাত তোলেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, “আমি রাত ১১টা ২০ মিনিটের দিকে বাসায় আসি। গেইট বন্ধ থাকায় ডাকাডাকির পর রুমমেটদের চাপে দারোয়ান গেইট খুললেও আমাকে মারধর করেন, এমনকি আমার ঘাড়ে চড় মারেন।

” 

ঘটনার প্রতিবাদে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা দারোয়ানের ওপর চড়াও হলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে ২নং গেইট বাজার এলাকায় শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। এক পর্যায়ে দারোয়ানের পক্ষ নিয়ে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান।

সহকারী প্রক্টর নাজমুল হোসাইন রাত প্রায় ১টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে বলেন, “আমরা বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছি।

এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীরা গ্রামবাসীর ওপর চড়াও হয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করছি। ” 

এরপর মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্থানীয়দের একত্রিত করা হয়। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাচামিয়ার দোকানের সামনে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়।

এসময় দোকানপাটের লাইট ভাঙচুর করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের কুপিয়ে আহত করা হয়। 

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান অভিযোগ করেন, “কিছু নেতার উসকানিতে আমাদের গ্রামের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি বারবার বলেছি, ওদিকে যাওয়া উচিত নয়। কিন্তু শোনেনি কেউ। ফলে অন্ধকারে স্থানীয়রা আমাদের রক্তাক্ত করেছে। ”

শিক্ষার্থী আরাফ বলেন, “মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা আসে—‘জোবরাবাসী এক হও, বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছে’। এরপরই চারদিক থেকে হামলা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীরা পাশে দাঁড়িয়েও সাহায্য করেনি। ”

এক আহত শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রশাসনের ব্যর্থতার কারণেই বারবার আমাদের ওপর হামলা হচ্ছে। যদি এবারও প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয়, তবে ধিক্কার এই প্রশাসনকে। ”

চবি মেডিকেলের চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ টিপু সুলতান জানান, “অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ”

প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, “আমরা একাধিক নিরাপত্তা টিম পাঠিয়েছি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকায় নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সময়মতো আসেনি। ”

রাত ৩টা পর্যন্ত সংঘর্ষ দফায় দফায় চলে। এসময় ২নং গেইট সংলগ্ন এলাকা ও চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। স্থানীয়রা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির একটি, পুলিশের দুটি ও নিরাপত্তা বাহিনীর একটি গাড়িসহ মোট ৪টি গাড়ি ভাঙচুর করে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত ৩টা ২০ মিনিটে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। তারা বিভিন্ন বাসায় আশ্রয় নেওয়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে ক্যাম্পাসে নিরাপদে পৌঁছে দেয়।

এ ঘটনার জেরে রবিবার (৩১ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকে পরীক্ষার্থী ছিলেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হলো। ”

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved bijoykantho© 2025