শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:১০ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তুলবো: তারেক রহমান একাত্তরের পক্ষে-বিপক্ষের রাজনীতি নতুন প্রজন্ম গ্রহণ করতে রাজি নয়: নাহিদ ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন -জুলাই ঘোষণাপত্র আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন অনিশ্চিত করে তুলেছে গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যা জাতির জন্য অশনি সংকেত: জামায়াত সেক্রেটারি বিশ্বসভ্যতায় মুসলমানদের অবদান ওমরাহ ও হজযাত্রীদের জন্য সুখবর জামানত বাতিলের ভয়ে পিআর পদ্ধতিতে ভোট চায় কিছু রাজনৈতিক দল : মেজর হাফিজ এখনো অনেক সচিব নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে : ফারুক বন ও পরিবেশ সুরক্ষায় মন্ত্রণালয়ের এক বছরের উদ্যোগ এআইয়ের অপব্যবহার রোধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে : ইসি

শোকজের জবাবে হাসনাত -এটা ছিল একটা অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি নীরব প্রতিবাদ

জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের দিন কক্সবাজার ভ্রমণ করায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শীর্ষ পাঁচ নেতাকে দল থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জবাব দিয়েছেন দলটির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ।

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) ফেসবুকে নিজের আইডিতে শোকজের জবাবের বিষয়টি শেয়ার করেন তিনি। তার স্ট্যাটাস থেকে জানা যায়, শোকজের লিখিত জবাব দলের দপ্তর সম্পাদকের মাধ্যমে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবকে পাঠানো হয়েছে।

স্ট্যাটাসে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, দলের উচিত ছিল গোয়েন্দা সংস্থা ও অসৎ মিডিয়ার বিরুদ্ধে দৃঢ় ব্যবস্থা নেওয়া। এর পরিবর্তে এমন ভাষায় আমাদের বিরুদ্ধে শোকজ দেওয়া হয়েছে- যা মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রতত্ত্বকে উসকে দিয়েছে।

স্ট্যাটাসে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনার স্বাক্ষরিত ৬ আগস্ট স্মারক নম্বর এনসিপি/শোকজ/২০২৫-২০২৫/০৮ নম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশটি আমি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছি এবং এনসিপির প্রতি আমার অঙ্গীকার ও দায়বোধ থেকেই আমি এই ব্যাখ্যা লিখছি।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে মানুষ জীবন দিয়েছিল নতুন বাংলাদেশের জন্য। এমন একটি রাষ্ট্র গঠনের আশায়, যেখানে কোনো স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না এবং প্রতিটি নাগরিক মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবেন। এই আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যেই এই সরকার গঠিত হয়েছিল। সরকারের উচিত ছিল এমন একটি ঐতিহাসিক ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করা, যা সেই মানুষগুলোর আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিনিধিত্ব করবে।’

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমি এবং অনেকেই ব্যথিত হই, যখন দেখি যে এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময় সেই মানুষদের কথা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে, যারা অভ্যুত্থানের মূল চালিকাশক্তি ছিলেন। শহীদ পরিবার, আহত এবং নেতৃত্বদানকারীদের অনেকেই মতামত প্রদানের সুযোগ পাননি, এমনকি অন্তর্ভুক্তির ন্যূনতম সম্মানটুকুও পাননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়ায় এমন কিছু উপাদান দেখি, যা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। যেমন, ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে সংবিধান সংস্কারের জন্য জনগণ পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপর দায়িত্ব অর্পণের অভিপ্রায় প্রকাশ করেছে। এই দাবিটি অসত্য এবং সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন আনার পথে একটি বড় অন্তরায়। আমরা শুরু থেকেই দাবি করে আসছি গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, যা রাষ্ট্রের কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন আনবে এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাবে।’

স্ট্যাটাসে এনসিপি নেতা বলেন, ‘উপরন্তু, ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় জানতে পারি যে আমাদের আন্দোলনের আহত এবং নেতৃত্বদানকারী অনেক ভাইবোনকে এই অনুষ্ঠান থেকে সম্পূর্ণভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা আমার কাছে শুধু রাজনৈতিক নয়, নৈতিক ব্যর্থতা বলেই মনে হয়েছে। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে এই অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। যেখানে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজনকে, শহীদ এবং আহতদের পরিবর্তে কিছু মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর কথা এবং মতামতকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, সেখানে উপস্থিত থাকার কোনো ইচ্ছা বা প্রয়োজন আমি বোধ করিনি।’

তিনি বলেন, ‘কাজেই এর পরদিন ঢাকার বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। উদ্দেশ্য ছিল এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টিতে পূর্বে গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো বোঝার চেষ্টা করা এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে চিন্তা করা। একইসঙ্গে এটি ছিল একটা অসম্পূর্ণ জুলাই ঘোষণাপত্রের প্রতি আমার নীরব প্রতিবাদ।’

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘ফলস্বরূপ, ৪ আগস্ট রাতে প্রথমে আমি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করি। তাকে না পেয়ে পরবর্তীতে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারীকে অবহিত করি যে আমি আমার স্কুলবন্ধুদের সঙ্গে দুই দিনের জন্য ভ্রমণে যাচ্ছি। যেহেতু তিনি সে সময় অফিসে আহ্বায়কের সঙ্গে ছিলেন, আমি তাকে অনুরোধ করি যাতে তিনি আহ্বায়কে বিষয়টি জানান। তিনি আমাকে জানান যে তিনি তা করবেন। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী আমাকে নিশ্চিত করেন যে তিনি আহ্বায়কে বিষয়টি জানিয়েছেন এবং আহ্বায়ক এতে সম্মতি প্রদান করেছেন। পরবর্তীতে আমার সঙ্গে নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী, সস্ত্রীক সারজিস আলম ও তাসনিম জারা- খালেদ সাইফুল্লাহ দম্পতি যুক্ত হন।’

‘কিন্তু এরপর যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। বিমানবন্দর থেকে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের ছবি ও ভিডিও করে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মিডিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। কিছু মিডিয়া সেখানে ক্রাইম মুভির মিউজিক জুড়ে দিয়ে ইচ্ছেমতো মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর অভিযোগসহ সেইসব উপস্থাপন করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছু মিডিয়া ও গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপকে অপরাধপ্রবণ এবং সন্দেহজনক হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। এমনকি গুজব ছড়ানো হয়েছে যে আমরা পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠকে যাচ্ছি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করতে। অথচ তিনি তখন বাংলাদেশেই ছিলেন না।’

এনসিপি নেতা বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এই প্রবণতা, যেখানে কাউকে টার্গেট করে রাষ্ট্রদ্রোহী বানিয়ে ফেলা যায়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চলতে পারে না। গোয়েন্দা সংস্থা ও মিডিয়ার এই সম্মিলিত ‘ডিমোনাইজেশন’ টেকনিক আজকে আমাদের টার্গেট করেছে। ভবিষ্যতে অন্য যে কাউকে করতে পারে। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক ব্যাপার হলো, গোয়েন্দা সংস্থা এবং কিছু মিডিয়া এই একই প্যাটার্নে হাসিনার আমলেও বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নামে প্রোপাগান্ডা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করত। নতুন বাংলাদেশেও গোয়েন্দা সংস্থা এবং কিছু মিডিয়ার এই পুরনো অপরাধপ্রবণতা আমাকে একইসাথে অবাক এবং ক্ষুব্ধ করে।’

তিনি বলেন, ‘এই পুরো ঘটনার সবচেয়ে দুঃখজনক ও নিন্দনীয় দিক ছিল তাসনিম জারার বিরুদ্ধে পরিচালিত নগ্ন ও কুরুচিপূর্ণ স্লাটশেইমিং। শুধুমাত্র একজন নারী হওয়ার কারণে তাসনিম জারাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশালীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার চালানো হয়। কিছু মিডিয়া চক্রান্তমূলকভাবে তাকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তিকর ও আপত্তিকর শিরোনাম প্রকাশ করতে থাকে। গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু গণমাধ্যমের সমন্বিত এই আক্রমণ একটি নারীকে হেয়প্রতিপন্ন করার সুস্পষ্ট চেষ্টা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই ন্যক্কারজনক আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল ভবিষ্যতে রাজনীতিতে অংশ নিতে আগ্রহী নারীদের নিরুৎসাহিত করা।’

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নারীদের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, অভ্যুত্থানের পরেও গোয়েন্দা সংস্থা ও কিছু গণমাধ্যমের যোগসাজশে একজন নারীর বিরুদ্ধে এমন হীন আক্রমণ কোনও অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি মনে করি, আমাদের পার্টির উচিত ছিলো এই গোয়েন্দা সংস্থা ও অসৎ মিডিয়ার বিরুদ্ধে দৃঢ় ব্যবস্থা নেওয়া। তার পরিবর্তে পার্টি এমন ভাষায় আমাদের বিরুদ্ধে শোকজ প্রকাশ করেছে যা মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রতত্ত্বকে উসকে দিয়েছে।

তিনি বলেন, যেকোনো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে শোকজ করতে হয় গঠনতন্ত্র বা বাই-লজের কোনো নির্দিষ্ট ধারা লঙ্ঘনের কারণে। আমাকে দেওয়া শোকজে এমন কিছুর উল্লেখ নেই। কারণ আমি পার্টির কোনো আইন লঙ্ঘন করিনি। এমন বিধিবহির্ভূত শোকজ দেওয়া এবং অতি উৎসাহী হয়ে তা মিডিয়ায় প্রকাশ করা কতটুকু রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচায়ক হয়েছে সে বিষয়ে গভীরভাবে ভাববার অনুরোধ করবো।

এনসিপি আরও বলেন, আমি এনসিপির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং মনে করি যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও গণতান্ত্রিক সহনশীলতার মাধ্যমেই আমাদের দল রাজনৈতিকভাবে আরও পরিণত হবে। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাকে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যার সুযোগ দেওয়ার জন্য।

দলের অনুমতি না নেওয়ায় পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে এনসিপি। গতকাল দলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব স্বাক্ষরিত পাঠানো নোটিশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের সফরের কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে। আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এই শোকজের জবাব দিয়েছেন দলের এই শীর্ষ নেতা।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024