রবিবার, ১৩ Jul ২০২৫, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন
রাজধানীর মিটফোর্ডে প্রকাশ্যে ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যা এবং দেশব্যাপী চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী বৈঠকে নেতারা বলেছেন, ‘দেশের বাজার, দোকানপাট, পরিবহন ও নির্মাণ খাত এখন চাঁদাবাজদের নিয়ন্ত্রণে। জাতি আজ নিরাপত্তাহীন ও আতঙ্কগ্রস্ত।’
শনিবার (১২ জুলাই) বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মাসিক বৈঠকে ব্যবসায়ী মো. সোহাগ হত্যাকাণ্ড এবং দেশজুড়ে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
দলটির আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, মিটফোর্ডে শত শত মানুষের সামনে একজন ব্যবসায়ীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে-এটি কোনো ব্যক্তিগত অপরাধ নয়, বরং বিচারহীনতার ভয়াবহ পরিণতি। এটি জাতির জন্য লজ্জাজনক।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি বাজার, পরিবহন ও নির্মাণ খাতে আজ চাঁদাবাজদের রাজত্ব চলছে। একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের দীর্ঘদিনের দখলদারত্ব ও চাঁদাবাজি এখন ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। এমনকি আলেম-উলামারাও এ দস্যুবৃত্তির শিকার হচ্ছেন।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে খেলাফত মজলিস আমির বলেন, আমরা চাই, সংসদের নিম্নকক্ষে আংশিক এবং উচ্চকক্ষে পূর্ণ পেয়ার পদ্ধতি চালু হোক। এতে করে রাজনীতি থেকে দুর্বৃত্তদের উৎপাত কমবে এবং নির্বাচনী ব্যবস্থায় সুবিচার প্রতিষ্ঠা পাবে ইনশাআল্লাহ।
বৈঠকে নেতারা বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত অংশ চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে, ফলে সাধারণ মানুষ দিন দিন আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে।
এ সময় জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোগের বিরোধিতা জানিয়ে দলটি বলেছে, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত হস্তক্ষেপ। এটি ইসলামী জীবনব্যবস্থা ও পারিবারিক কাঠামোর বিরুদ্ধে একটি গ্লোবাল ইসলামবিরোধী এজেন্ডার অংশ।
নেতারা অভিযোগ করেন, ড. মুহাম্মদ ইউনুস এখন সেই গ্লোবাল এজেন্ডার অন্যতম বাহক। তার উপদেষ্টাদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরেই ইসলামী শরিয়াহ ও সামাজিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আসছেন। নেতারা বলেন, এই তথাকথিত মানবাধিকার অফিস ইতোমধ্যে বহু মুসলিম দেশে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা ও সামাজিক শালীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে। এটি ধর্মনিরপেক্ষতা ও যৌন বিচ্যুতি চাপিয়ে দেওয়ার একটি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কেন্দ্র।
তারা বলেন, বাংলাদেশ একটি ঈমানি চেতনায় প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন রাষ্ট্র। ১৯৪৭, ১৯৭১, ২০১৩ ও ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান প্রমাণ করেএই জাতি ইসলাম, স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদার প্রশ্নে কখনো আপস করেনি। কিন্তু আজ সেই স্বকীয়তার ওপর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। জাতীয় স্বার্থ, ধর্মীয় স্বকীয়তা ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার প্রশ্নে কোনো আপস নয় এমন অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন নেতারা। তারা বলেন, এই ষড়যন্ত্র শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিরোধ করা হবে ।
দলটির মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, নায়েবে আমির মাওলানা রেজাউল করীম জালালী, মুফতি সাঈদ নূর, মাওলানা আফজালুর রহমান, মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা শাহিনুর পাশা চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা আব্দুল আজিজ, মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী, মুফতি শরাফত হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলালসহ কেন্দ্রীয়, মহানগর ও নির্বাহী কমিটির শীর্ষ নেতারা।