শনিবার, ১২ Jul ২০২৫, ০৯:৩৪ অপরাহ্ন
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. লিসানুল আলম লিসান পদত্যাগ করেছেন। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা ১৬ মিনিটে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
লিসান ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলেও তার দীর্ঘ পোস্টে রাজনৈতিক হতাশা, ভাঙচুর এবং নেতাদের স্বার্থপরতাকে দায়ী করেছেন। তিনি লিখেছেন, আমি ব্যক্তিগত কারণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।
ছাত্রদলের দুঃসময়ে পাশে ছিলেন দাবি করে লিসান বলেন, জন্মলগ্ন থেকে পারিবারিক রাজনীতির সূত্র ধরে দীর্ঘ ১০ বছরের উর্ধ্বে এই দলের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলাম। বিএনপির একদম দুঃসময়েও দলের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলাম। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাবা জেলে থাকাকালীন (মামলা সংখ্যা ২৮), দীর্ঘ দুই মাসের উর্ধ্বে বাড়ি ছাড়া হয়েছি। ভোর রাতে লুকোচুরি করে আম্মার সাথে একবার দেখা করে আসতাম। ২৮ অক্টোবর সমাবেশ পরবর্তী ও হরতাল অবরোধসহ বহু কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম। এই দলের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি ও বহু নির্মমতার ভাগিদার আমি হয়েছি। সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনেও সরাসরি সামনের সারিতেই আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। এই সব কিছুর মূলে আমার একটাই স্বপ্ন ছিলো, ‘নতুন বাংলাদেশের বিনির্মাণ এবং একটা সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ’।
কিন্তু ৫ আগস্টের ঘটনার পর সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে বলে জানান লিসান। তিনি লেখেন, বিশেষ করে ৫ আগস্ট পরবর্তীতে, অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম, দেশ নতুন করে বিনির্মাণ হবে। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, ৫ আগস্ট পরবর্তীতে দেশটাকে সুন্দরভাবে বিনির্মাণের পরিবর্তে, সবাই যে যার মতো করে নিজের স্বার্থ এবং ভোগের রাজনীতি করে গেছে। এই দায়ে জামাত, বিএনপি, এনসিপি সবাই দন্ডিত। সবাই নয়া বন্দোবস্তের কথা বললেও কেউ কথা রাখেনি। জুলাইকে কেউ স্মরণ করেনি। জুলাইকে কেউ মনে রাখেনি। শহীদদের রক্তের সাথে সবাই নির্বিচারে গাদ্দারি করেছে।
নিজ এলাকা নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার উদাহরণ দিয়ে লিসান লেখেন, একটা কথা বলি। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে আমার নিজ উপজেলা হাতিয়ায় যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়েছে, এনসিপি এবং বিএনপি কর্তৃক আওয়ামী লীগের যে পরিমাণ পুনর্বাসন হয়েছে, তা আমি বিগত কোনো সময় দেখি নাই। বহু নেতাকে দেখেছি, যাদের সুনির্দিষ্ট উপার্জনের সোর্স না থাকলেও এখন শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন, রাতারাতি ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। বিএনপির পাশাপাশি এনসিপির হান্নান মাসুদও চাঁদাবাজি ও আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করে রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। অথচ উনার মতো তরুণ নেতা চাইলে পুরো রাজনীতির প্রেক্ষাপটই বদলে দিতে পারতেন। জামায়াতও এই অন্যায় গাদ্দারির বাইরে নয়। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ক্ষমতা বলে পদায়নসহ, ৫ আগস্টের পরবর্তীতে যথেষ্ট নোংরা রাজনীতির চর্চা তারা করে গেছেন। (দয়া করে কোনো নব্য রাজনীতিবিদ আমাকে লজিক/জ্ঞান দিতে আসবেন না। সব দলেরই রাজনীতির একদম ভেতরের পিঠ আমি খুব ভালো করেই দেখে আসছি)।
তবে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে কিছু সৎ ও নিষ্ঠাবান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন লিসান। তিনি লেখেন, তবে রাজনৈতিক সব দলেই প্রকৃত সৎ এবং নিষ্ঠাবান কিছু ভালো কিছু মানুষেরও দেখা পেয়েছি। আপনাদের জন্য সমবেদনা। আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে এদেশে সুষ্ঠু ও গঠনতান্ত্রিক রাজনীতির স্বপ্ন দেখেছি, প্রকৃত দেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখে এসেছি, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। আমরা ব্যর্থ।
ক্ষমা চেয়ে লিসান বলেন, ‘আমার জানামতে সজ্ঞানে রাজনীতির অপব্যবহার করে কখনো কারো কোনো ধরনের ক্ষতি আমি করিনি। যদি ভুলবসত আমি করেও থাকি, আপনাদের নিকট আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।’
শেষে লিসান লেখেন, যেদিন প্রকৃত স্বচ্ছ বাংলাদেশ বিনির্মাণের ডাক আসবে, সেদিন আপনাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমিও থাকবো মিছিলের অগ্রভাগে, প্রথম বুলেটের শিকারি হতে। তবু এদেশের বুকে শান্তি ফিরে আসুক। এদেশের মাটির ঊর্ধ্বে আমার কাছে কিছুই মূল্যবান না।
লিসানুল আলম লিসান পরে মন্তব্যের ঘরে লেখেন, আর কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। রাজনৈতিক কেউ ব্যক্তিগত সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাইলে আমার কোনো আপত্তি নেই। তবে আজ থেকে কোনো প্রকার রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার আমি হতে চাই না। মানুষের জন্য ভালো কিছু করার মানসিকতা থেকেই আমার রাজনীতিতে আসা। তবে, মনে হচ্ছে না, এদেশে তা সম্ভব। রাজনীতির বাইরেও মানুষের জন্য অনেক কিছু করা যায়, আজীবন নিঃস্বার্থভাবে করে যাবো। আম্মা সবসময় বলতেন, মানুষের দোয়া থেকেও বড় কোনো প্রাপ্তি হতে পারে না। আমার জন্য আপনারা দোয়া করবেন। আমি, আপনাদের স্নেহ মমতায়, ভালো মানুষ হয়ে আপনাদের তরে বেঁচে থাকতে চাই।
লিসানের অভিযোগ মিথ্যাচার দাবি করে তার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। তিনি লিসানের পোস্টে মন্তব্য করে লেখেন, ‘ভাই আমি কার কাছ থেকে ৫ পয়সা চাঁদা নিয়েছি? বা আমার সাথে চলে এমন কেউ? দেখাবেন একটা উদাহরণ? আর শত কোটি! আপনার দুঃখ বুঝি, বাট আমারে নিয়ে মিথ্যাচার কেন ভাই? সন্দেহ থাকলে আমার সাথে এক সপ্তাহ পুরো সময় ঘুরেন, আসেন, অবজারভ করেন ভাই।’এর জবাবে লিসান লেখেন, ‘আপনার প্রশ্নের উত্তর,আমার থেকেও আপনিই ভালো জানেন। আমাকে যে প্রশ্নটা করেছেন, সৎ সাহসে, সৎ বিবেকে আপনি নিজেকেই এই একই প্রশ্ন আপনি করুন। আমি আপনার এলাকার ছোট ভাই। ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী আর ৫ আগস্ট পরবর্তী আপনার এতো এতো বিলাসী জীবনের উৎস কী ভাই? আমাকে প্রশ্ন না করে নিজেকে করুন। ব্রিকফিল্ডগুলো থেকে কে টাকা নিলো? চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কে নিলো? আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর থেকে কে নিলো? নিয়োগ বাণিজ্য কে করলো?’