শনিবার, ১২ Jul ২০২৫, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
হাসিনাকন্যা পুতুলকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জুলুমমুক্ত দেশ গড়তে হবে : ফয়জুল করিম অপরাধীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তা সরকারের কাছেই প্রশ্ন: তারেক রহমান অতি দ্রুত প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করুন : মির্জা ফখরুল সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের হাতে জামায়াত দেশ ছেড়ে দেবে না: রফিকুল ইসলাম মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে: আইন উপদেষ্টা ৫ আগস্টের পর ভেঙেছে স্বপ্ন, পদত্যাগ করলেন ছাত্রদল নেতা মিটফোর্ডের সামনে নৃশংস হত্যায় আরও একজন গ্রেফতার, মোট ৫ ব্যবসায়ীকে পাথর মেরে খুনের ঘটনা বড়ই দুঃখজনক: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মিটফোর্ডের নির্মমতায় ভাষা হারিয়ে ফেলেছি: জামায়াত আমির

জুলাই সনদকে মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্তির কথা বলা ‘বিভ্রান্তিমূলক’: রিজভী

জুলাই সনদ বা জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলাকে ‘বিভ্রান্তিমূলক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেছেন, জুলাই সনদের অনেক বিষয় বিএনপি গ্রহণ করেছে। কিন্তু এটি মূলনীতির মধ্যে নিতে হবে কেন? যুগে যুগে দেশে আরও সংস্কার হবে। সংস্কার কোনো থাই পর্বতমালার মতো স্থির বিষয় নয়, এটি একটি গতিশীল ব্যাপার।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে তো সংস্কারবিরোধী কোনো কথা বলা হয়নি, সংস্কারের পক্ষেই বলা হয়েছে। কিন্তু জুলাই সনদকে মূলনীতির মধ্যে নিতে হবে, এগুলো বলে তো বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এতে জনগণও বিভ্রান্ত হচ্ছে। আপনারা জনগণকে কেন এভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন? এসব না করে জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফেরত দিন। সেটিই হবে সবচেয়ে বড় কাজ।

শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জিয়া পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনটির সভাপতি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল কুদ্দুসের রোগমুক্তি কামনায় দুস্থদের মাঝে জায়নামাজ বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে গতকাল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্তের বিষয়ে ‘বিএনপি একমত নয়’ বলে জানান দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ঘোষণাপত্রের পুরোটা না নিয়ে জুলাই-আগস্ট ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের চেতনাটুকু ধারণ করে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য চতুর্থ তফসিলে শুধু ‘জুলাই অভ্যুত্থান ২০২৪’ আনা যেতে পারে।

সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ঘোষণাপত্র লিটারেচার হিসেবে, ডকুমেন্টারি হিসেবে আর্কাইভে থাকে, সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত থাকে না। ’৭২-এর সংবিধানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে সংযুক্ত না করা এটা প্রমাণ করে যে, কোনো ঘোষণাপত্র সংবিধানের অংশ হয় না।

দেশে অর্থনীতির কঠিন ও করুণ অবস্থা চলছে মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এটি শুধু মুখের কথা নয়। সামনে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দেশে দুর্ভিক্ষ হয় কি না এটিই এখন মানুষের মনে মনে। দুর্ভিক্ষের আলামত যদি আমরা দেখতে পাই শুনতে পাই তাহলে তো জনগণ আমাদের ছেড়ে দেবে না।

বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে বৃহত্তর আদর্শের জন্য লড়াই করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা বৃহত্তর আদর্শের জন্য লড়াই করছি। মানবিক সাম্য ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছি। আইনের শাসনের জন্য লড়াই করছি। যার জন্য দরকার চিরায়ত গণতন্ত্র প্রকৃত গণতন্ত্র খাটি গণতন্ত্র। এটি বৃহত্তর আদর্শের লড়াই, যেখানে জনগণ তাদের মালিকানা ফিরে পাবে। সেই মালিকানা আটকে রাখা তো বড় ধরনের ফ্যাসিবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া।

তিনি আরও বলেন, জনগণের সরকার ক্ষমতায় থাকলে প্রতিটি পদে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। এখন সেই জবাবদিহি নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকেও আমরা মনে করি জনসমর্থিত, কারণ সব রাজনৈতিক দল শুধু আওয়ামী লীগ আর তাদের কয়েকটি দোসর ছাড়া সবাই এই সরকারকে সমর্থন দিয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আমরা সবাই সমর্থন করে যাচ্ছি। কিন্তু এটাও তো ঠিক, দুর্ভিক্ষের আলামত দেখতে পেলে, শুনতে পেলে জনগণ আমাদের ছেড়ে দেবে না।

বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, আজ অসংখ্য গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ কর্মহীন হচ্ছে। মানুষ যদি খাবার কিনতে না পারে তাহলে কিন্তু দুর্ভিক্ষের আলামত তৈরি হবে। এই আলামত তৈরি হলে কেউই কিন্তু রেহাই পাবে না। তখন হাততালি দেবে ওই পতিত ফ্যাসিস্টরা।

রিজভী বলেন, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে এটা ঠিক, পাশাপাশি কর্মসংস্থান না বাড়ালে জনগণ কিন্তু কাউকে রেহাই দেবে না, কাউকে কিন্তু ছেড়ে দেবে না। এ কথাগুলো ভাবুন, চিন্তা করুন। শুধু শিশুদের মতো ‘ওই চকলেট আমাকে পেতেই হবে, ওই খেলনাটা আমাকে দিতেই হবে’ এরকম গো ধরে থাকলে পার পাবেন না। এতে গণতন্ত্রেরও সর্বনাশ হবে, প্রকৃত গণতান্ত্রিক চর্চা মুখ থুবড়ে পড়বে এবং আমরা একটি দীর্ঘস্থায়ী অগণতান্ত্রিক শক্তির কাছে জিম্মি হয়ে পড়বো।

সংস্কার কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে বিএনপির ৩১ দফার মধ্যে প্রায় অনেক জিনিসই প্রতিফলিত হয়েছে। জুলাই সনদ বা জুলাই ঘোষণাপত্রের অনেক বিষয় বিএনপি গ্রহণ করেছে। কিন্তু এটি মূলনীতির মধ্যে নিতে হবে কেন? যুগে যুগে দেশে আরও সংস্কার হবে। সংস্কার কোনো থাই পর্বতমালার মতো স্থির বিষয় নয়, এটি একটি গতিশীল ব্যাপার।

তিনি বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রে যখন যে সংস্কার প্রয়োজন হবে গণতন্ত্রের স্বার্থে রাষ্ট্রের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে তখন সেই সংস্কার করে আইন প্রণয়ন হবে। এটিই তো গণতান্ত্রিক সংবিধানের নিয়ম। কিন্তু এটিকে (জুলাই সনদ বা ঘোষণাপত্র) মূলনীতির মধ্যে নিতে হবে, এগুলো বলে তো বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এতে জনগণও বিভ্রান্ত হচ্ছে। আপনারা জনগণকে কেন এভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন? এসব না করে জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফেরত দিন। সেটিই হবে সবচেয়ে বড় ।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, জিয়া পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম, মহাসচিব ড. এমতাজ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আব্দল্লাহহিল মাছুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম, সদস্যসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুল।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024