শনিবার, ১২ Jul ২০২৫, ০৯:১১ অপরাহ্ন
টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীরক্ষা বাঁধের ২১টি স্থানে ভেঙে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর থেকে বৃষ্টি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীর পানিও কমতে শুরু করেছে। তবে ভাঙন স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল।
তীব্র স্রোতে পানি প্রবেশ করছে ছাগলনাইয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। একাধিক সড়ক পানিতে তলিয়ে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। এতে দুর্ভোগে পড়েছে ২০ হাজারের বেশি মানুষ।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, পরশুরামের ১২টি ও ফুলগাজী উপজেলায় ৯টিসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মোট ২১টি স্থান ভেঙে গেছে। তার মধ্যে মুহুরী নদীর ১১টি, কহুয়া নদীর ৬টি ও সিলোনিয়া নদীর ৪টি অংশে ভাঙনে ১০০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার আংশিক অংশে ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যাদুর্গত ৬ হাজার ৮২৬ জন মানুষ অবস্থান করছে। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এরইমধ্যে ৯০ জন স্বেচ্ছাসেবক মাঠে কাজ করছে।
পাঠাননগর এলাকার বাসিন্দা মনসুর আহমেদ বলেন, পরশুরাম-ফুলগাজীর ভাঙন স্থান দিয়ে আসা পানিতে ছাগলনাইয়া প্লাবিত হচ্ছে। সড়ক পানিতে তলিয়ে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে পানির চাপ বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে যদি বৃষ্টি হয় তাহলে পানি ফেনী সদর উপজেলাতেও প্রবেশ করার শঙ্কা রয়েছে।
মহামায়া ইউনিয়নের উত্তর সতর গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল আলম বলেন, বিগত দুই দশকে উত্তর সতর নদীকূলের সড়কটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এখান দিয়ে মুহুরী নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে আশপাশের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়৷ এবারও উপজেলার মাটিয়াগোধা, দক্ষিণ সতর নদীরকূল, দক্ষিণ সতর, উত্তর পানুয়া, কাশিপুর, নিচিন্তা, লক্ষ্মীপুরসহ ১০টিরও বেশি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে।
ফুলগাজীর ঘনিয়ামোড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রকিব বলেন, নদীতে পানি কমলেও ভাঙন স্থান দিয়ে তীব্র স্রোতে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। গলা সমান পানিতে বের হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছি। বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় আরও বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, জেলায় টানা তিন দিন ধরে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারও জেলাজুড়ে হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, রাত ১১টার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীর পানি কমলেও ভাঙন স্থান দিয়ে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি নেমে গেলে বাঁধ মেরামতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার আংশিক অংশে প্রায় ২০ হাজার মানুষ দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে। এরইমধ্যে ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৭ হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। জেলার ৬ উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য সাড়ে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।