বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২১ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যু সমাধান হবে আলোচনার টেবিলেই: সালাহউদ্দিন আহমদ গাজায় ইসরায়েলের বড় ধরনের স্থল অভিযান, নিহত ৬৫ হাজার ছুঁইছুঁই গাজায় ৭০০ বছরের পুরোনো মসজিদ গুঁড়িয়ে দিলো ইসরায়েল ৩৬৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ: আসামি এস আলম ও নাবিল গ্রুপের মালিকসহ ৪৩ জন প্রথমবারের মতো ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় রাকসুর ভোটকেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতায় আনাসহ ৭ দফা দাবি শিবিরের বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের দাবি যাচাইয়ে ৬ সদস্যের কমিটি হাসিনার আরও দুটি লকার জব্দ শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের কেউ ভোট দিতে পারবেন না দুর্গাপূজায় কোনো ধরনের হুমকি নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

বেনাপোল দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যাত্রী যাতায়াত কমেছে ৮৩%

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশে যাত্রী যাতায়াত ৮৩ শতাংশ কমে গেছে। ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা আরও কমবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বেনাপোল ইমিগ্রেশন ও শূন্যরেখায় গিয়ে দেখা গেছে, বন্দরের পরিবেশ একেবারে নিরব। যেখানে আগে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য দেখা যেত, সেখানে আজ যেন এক ধরনের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।

ইমিগ্রেশনের অধিকাংশ কাউন্টারের কর্মকর্তারা হাত গুটিয়ে বসে আছেন, কুলি-শ্রমিকদেরও তেমন ব্যস্ততা নেই। মাঝে মাঝে কয়েকজন যাত্রীর আসা-যাওয়া চোখে পড়ছে, তবে ব্যস্ততার কোনো চিহ্ন নেই। 

বেনাপোল ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার বেনাপোল বন্দর দিয়ে ২ হাজার ২৮১ যাত্রী দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করেছেন, যার মধ্যে ভারতীয় নাগরিক ছিলেন ১ হাজার ৩৩৭ জন। মঙ্গলবার এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৪৩, এর মধ্যে ভারতীয় নাগরিক ১ হাজার ১১৯ জন।

গত সোমবারও ১ হাজার ৯৭১ জন যাত্রী যাতায়াত করেছেন, এর মধ্যে ৯৪৫ জন ছিলেন ভারতীয় নাগরিক। 

গত বছর জুলাই মাসের পর থেকে ভারত সরকার বাংলাদেশে ভ্রমণ ভিসা দেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে, যার ফলে এই সংকট আরও গভীর হয়েছে। আগস্টের আগ পর্যন্ত, বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করতো।

এ বিষয়ে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূঞা বলেন, “ভারত সরকার শুধুমাত্র চিকিৎসার জন্য ভিসা দিচ্ছে।

অন্যান্য সকল ভিসা বন্ধ করে দেওয়ার ফলে যাত্রী সংখ্যা ৮৩ শতাংশ কমে গেছে। বর্তমানে প্রতিদিন ২ হাজারের মতো যাত্রী যাতায়াত করছে। ফেব্রুয়ারিতে ভ্রমণ ও বাণিজ্য ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে, যাতায়াত আরও কমে যাবে। ” 

এদিকে, বাণিজ্য ভিসাও বন্ধ রয়েছে, যা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বিপর্যয়ের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বেনাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, “বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যের মধ্যে শাড়ি কাপড়, থ্রিপিস ও যন্ত্রপাতির পরিমাণ বেশি।

আমদানিকারকরা ভারতে গিয়ে এসব পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করেন। তবে ভিসা বন্ধ থাকায় তারা ভারতে যেতে পারছেন না, ফলে ব্যবসায় প্রভাব পড়তে পারে। ” 

“লাগেজ পার্টি”র গল্প

বর্তমানে যারা যাতায়াত করছেন, তাদের মধ্যে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই রোগী, যারা চিকিৎসার জন্য ভারতে যাচ্ছেন। এছাড়া, “লাগেজ পার্টি” নামে পরিচিত কিছু মানুষও রয়েছেন, যারা ভারতীয় পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে আসছেন।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ এলাকার বাসিন্দা হাফিজা মন্ডল প্রতিদিন সকালে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসেন। তার সাথে থাকা ব্যাগে কিছু ভারতীয় জিরা, কিসমিস বা চকলেট থাকে, সেগুলো বেনাপোলের নির্দিষ্ট দোকানে দিয়ে আবার বিকেল নাগাদ তিনি ওপারে ফিরে যান। এই কাজই তার জীবিকা।

হাফিজা মন্ডলের মতো প্রায় ২০০ নারী এখন প্রতিদিন এই কাজ করেন। তাদের সবার কাছে কিছু ভারতীয় পণ্য থাকে। বন্দর সংশ্লিষ্টদের কাছে তারা “লাগেজ পার্টি” নামে পরিচিত। ভারত সরকার বাংলাদেশীদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করার আগে এই সংখ্যা ছিল প্রতিদিন প্রায় এক হাজারের মত।

গত মঙ্গলবার বেনাপোল ইমিগ্রেশনে গিয়ে দেখা গেলো, হাফিজা মন্ডলসহ দুই নারী ইমিগ্রেশনের খোলা আঙিনায় বসে কথা বলছেন। তারা বিমর্ষ ও ক্লান্ত। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেল, তারা একসাথে কয়েকজন বনগাঁ থেকে বেনাপোলে এসেছেন। তাদের কাছে ছিল কিসমিস, জিরা, চকলেট। বেনাপোলের নির্দিষ্ট জায়গায় বিক্রি করে আবার ফিরে যাচ্ছেন।

হাফিজা মন্ডল বলেন, “আমার বাড়ি পেট্রাপোলের ওপারে বনগাঁয়। আমি প্রতিদিন সকালে বেনাপোলে আসি। সাথে করে কিছু কিসমিস, জিরা, চকলেট নিয়ে আসি। বিক্রি করে আবার বিকেলে ফিরে যাই। ”

হাফিজা মন্ডলের সাথে থাকা আছিয়া মন্ডল বলেন, “কাজটি এখন আর আগের মত সহজ নেই। কাস্টমস খুব ঝামেলা করে। ”

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024