মঙ্গলবার, ০১ Jul ২০২৫, ০৬:৫২ অপরাহ্ন

শিরোনাম :

যুদ্ধের ফলাফল নিঃসন্দেহে ইরানের পক্ষে

ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধ এমন একটি যুদ্ধ, যেখানে উভয় দেশই নিজেদের বিজয়ী দাবি করতে পারে। তবে ইসরায়েলের হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেদিন ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা-নাতানজ, ফোরদো এবং ইসফাহানে হামলা চালায়, সেদিনই মূলত ইসরায়েল আন-অফিশিয়ালি পরাজয় বরণ করে। যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়া এ যুদ্ধ চালিয়ে নেওয়া ইসরায়েলের জন্য কঠিন হয়ে পড়ছিল। ইরানে হামলার শুরুতেও ইসরায়েল মূলত বুঝে উঠতে পারেনি, ইরান এত কঠিন প্রতিক্রিয়া দেখাবে। ইসরায়েল এ যুদ্ধে নিজেদের বিজয়ী দাবি করতে পারে, তবে বিজয় উদযাপন করার মতো তাদের কাছে খুব কমই কারণ আছে।

যেমন, ইসরায়েল চেয়েছিল, ইরানের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন করতে। কিন্তু তাতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। এমনকি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েও হামলা চালিয়েছিল এবং দাবি করেছিল, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো এখন পুরোপুরি অকার্যকর। কিন্তু তাদের এ বক্তব্যও খুবই সন্দেহজনক, কারণ ইরানের ভাষ্যমতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার আগেই তারা তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ভাণ্ডার অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছিল। ইসরায়েল চেয়েছিল, ইরানের ইচ্ছাশক্তি ধ্বংস করতে; কিন্তু তাতেও তারা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে।

এই যুদ্ধের ফলাফল নিঃসন্দেহে ইরানের পক্ষে। কারণ, ইসরায়েল এবং আমেরিকা শুধু পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করার জন্যই নয়, বরং ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে উৎখাত করার জন্যও একত্রিত হয়েছিল, যা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে।

১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের অর্জন

১) ইরান কাতারে মার্কিন ঘাঁটি ও ইসরায়েলের প্রধান শহরগুলোতে সমন্বিত আঘাত হানার পর ইরানের শর্ত মেনেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি করতে বাধ্য হয়েছে।

২) ইরান এমন কাজ করেছে, যা অন্য কোনো দেশ কখনও সাহস করেনি।

৩) ইরান মধ্যপ্রাচ্যে তথা মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ব্যাপক ক্ষমতাশালী হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে।

৪) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করতে চেয়েছিল; কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। এ বিষয়ে ইরানের পারমাণবিক সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালোন্দি বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কখনও থামবে না। আমাদের যে সম্ভাবনা এবং সক্ষমতা রয়েছে, তাতে স্বাভাবিকভাবেই এই কর্মসূচি চলমান থাকবে এবং কখনও থামবে না।’

৫) ইরান ইসরায়েলের ২০ বছরের ইন্টারসেপ্টর ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন হ্রাস করেছে।

৬) ইসরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘ইরানের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন’ করতে করতে ব্যর্থ হয়েছে।

৭) ইসরায়েল ব্যাপকভাবে তার কৌশলগত ক্ষতি গোপন করেছে। ফলে, ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বিষদ ধারণা পাওয়া যায়নি। ইসরায়েলে কর্মরত জার্মানির জাতীয় চ্যানেল এআরডি আউটলেটের একজন সাংবাদিক জানান, ‘ইসরায়েল আমাদের সামরিক ও কৌশলগত অবস্থানে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের ছবি তোলা বা প্রতিবেদন করার অনুমতি দেয়নি। আমাদের শুধু বেসামরিক এলাকায় আঘাতের চিত্র দেখানোর অনুমতি দিয়েছিল।’

৮) যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ঠিক আগে ইসরায়েলের ওপর ইরানের হামলা অত্যন্ত তীব্র ছিল এবং এতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু সামরিক সেন্সরশিপের কারণে, শুধু বীরশাবায় হামলার প্রভাব সম্পর্কে জানা গেছে। কারণ, এটি বেসামরিক এলাকায় অবস্থিত।

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার ১২ দিনের যুদ্ধে কে জিতেছে, এ বিষয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করেছে ওয়ার্ল্ড অফ স্ট্যাটিস্টিকস। জরিপে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার জনেরও বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন। এতে ৫৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী ইরান জয়লাভ করেছে বলে মত দিয়েছেন এবং ইসরায়েলের পক্ষে ভোট পড়েছে ৪৩ শতাংশ।

এখন দেখার বিষয়, ভবিষ্যতে ইরান-ইসারায়েল যুদ্ধবিরতি কতদিন কার্যকর থাকে, দখলদার ইসরায়েলিদের ইতিহাসই প্রতারণার। সাবরা-শাতিলা থেকে গাজা, বৈরুত থেকে রাফাহ- ইতিহাস সাক্ষী যে ইসরায়েল সবসয়ই যুদ্ধবিরতির নামে প্রতারণা করেছে। প্রতিবারই দায় চাপানো হয়েছে প্রতিপক্ষের ওপর। তবে ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে ঠিকই; কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো নতুন আক্রমণের কঠোর জবাব দেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।লেখক : অনলাইন ইনচার্জ, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024