বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১২ অপরাহ্ন
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আশঙ্কা করা হচ্ছে আগামী নির্বাচনে মাসল ও ব্যাগ মানির মাধ্যমে অন্যের ভোট হাইজ্যাক করার চেষ্টা হতে পারে। এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা যুবক হয়ে বিস্ফোরিত হবেন বলে সতর্ক করেন তিনি।
তিনি বলেন, যুবকদের ভোট নিয়ে কাড়াকাড়ি বরদাস্ত করা হবে না। যুবকেরা নিজেদের ভোট নিজেরাই দেবে এবং জামায়াত তাদের পাশে থেকে লড়াই করবে। কোনো ডাকাত যেন যুবকদের ওপর হাত তোলার দুঃসাহস না দেখায়—এ জন্য এখন থেকেই প্রস্তুত থাকতে হবে।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা যাকে পছন্দ কর তাকে ভোট দেবে। আমাকে দেবে কি দেবে না সেটা তোমাদের বিষয়। কিন্তু তোমাদের অধিকারের জন্য আমরা লড়াই করব।
মঙ্গলবার রাতে জামায়াতে ইসলামীর কাফরুল দক্ষিণ থানার উদ্যোগে আয়োজিত প্রীতি সমাবেশে এসব বক্তব্য দেন ডা. শফিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতে মজলুম মানুষের কান্না কিছুটা হলেও থামবে। স্বজনহারা পরিবারগুলো সাময়িক সান্ত্বনা পাবে। বিচার স্পষ্ট ছিল এবং লাইভে সম্প্রচার হওয়ায় এটি ন্যায় বিচারের মানদণ্ড হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আমরা কারও ওপর কোনো অবিচার চাই না; প্রত্যেক নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে কোনো সম্পদশালী ব্যক্তির সম্পদ কেড়ে নেওয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বরং তাদের সম্পদের পাহারাদারি করা হবে। কোনো চাঁদাবাজ ব্যবসায়ীদের ভয় দেখাতে পারবে না। ফুটপাত থেকে বড় ব্যবসায়ী—কেউ চাঁদাবাজদের হাত থেকে রেহাই পায় না, তাই চাঁদামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তারা অঙ্গীকারবদ্ধ। তার দাবি, চাঁদা বন্ধ হলে দ্রব্যমূল্য অর্ধেকে নেমে আসবে এবং দেশের অগ্রগতি দ্রুত এগোবে।
দুর্নীতিকে সমাজের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে প্রবেশ করা “বিষবাষ্প” আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং দুর্নীতি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই থামবে না।
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বিচারকার্যে কারও মুখের দিকে তাকানো চলবে না। তিনি নিজেও যদি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থেকে কোনো অপরাধে জড়ান, তবে তার প্রতিও যেন ন্যায়বিচার হয়। বিচারকদের মর্যাদা রক্ষা করতেই হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অর্থব্যবস্থা বিষয়ে জামায়াত আমির বলেন, দেশের ব্যাংক, বীমা, কর্পোরেশন ও শিল্প খাত লুটপাটে ধ্বংস হয়ে গেছে। জনগণের সম্পদ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। ভবিষ্যতে যাতে কেউ জনগণের সম্পদে হাত দিতে না পারে সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, জামায়াত সকল সভ্য দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়, তবে কারও প্রভুত্ব মেনে নেবে না। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি থাকা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নারীদের নিরাপত্তা ও কর্মক্ষেত্র নিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি জানান, পূর্বে কর্মঘণ্টা কমানোর প্রস্তাবের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। তার দাবি, নারী শুধু কর্মী নন, তারা পরিবার ও সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু; কর্মঘণ্টা কমালে তারা আরও মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারবেন এবং পরিবারকেও সময় দিতে পারবেন, যা শেষ পর্যন্ত সমাজেরই উপকারে আসবে।