সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৩৫ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তিতর্ক চলাকালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আদালতে মতিউর রহমান রেন্টুর ‘আমার ফাঁসি চাই’ বইয়ের একাধিক উদ্ধৃতি তুলে ধরেছেন। বইটিতে উল্লেখিত শেখ হাসিনার বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার বিবরণ বিশেষভাবে আলোচনায় আসে যুক্তিতর্কের পঞ্চম দিনে।
বইয়ের উদ্ধৃতিতে বলা হয়, বিরোধী দলে থাকাকালে শেখ হাসিনা লাশ দেখতে যাওয়ার আগে সহকারীকে বলেন, রুমালে গ্লিসারিন মেখে দিতে, যেন লাশ দেখে রুমাল ধরতেই চোখে পানি চলে আসে। চিফ প্রসিকিউটর ওই অংশসহ জাহানারা ইমাম এবং লাশকে ঘিরে রাজনৈতিক আবহের বর্ণনাও আদালতে পড়ে শোনান।
বইয়ের ৭১ নম্বর পৃষ্ঠার বর্ণনা অনুযায়ী, শেখ হাসিনা বিকেলে বলেন যে নতুন নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ তাকে খোঁজও করছেন না। এরপর হানিফের বাসায় ফোন করা হলে তার স্ত্রী জানান, তিনি অসুস্থ। পরে সন্ধ্যায় হানিফের বাসায় গিয়ে জানা যায়, লালবাগে বিএনপির পরাজিত কমিশনার প্রার্থী আব্দুল আজিজ গুলি করে সাতজনকে হত্যা করেছে। শেখ হাসিনা কথা বলতে চাইলে হানিফ জানান, তিনি অসুস্থ এবং লালবাগের ঘটনার বিষয়ে ব্যস্ত।
বই অনুযায়ী, হানিফের বাসা থেকে ফিরে মিন্টো রোডে শেখ হাসিনাকে বিষয়টি জানালে তিনি খুশি হয়ে গান গাইতে থাকেন এবং পরদিন সকালে আহত-নিহতদের খোঁজ নিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন।
পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে সাতজনের লাশ দেখতে যাওয়ার আগে শেখ হাসিনা বলেন, রুমালে গ্লিসারিন লাগিয়ে দিতে। কেউ একজন বলেন, গ্লিসারিন ছাড়াই তিনি রুমাল ধরে রাখলে মনে হবে তিনি কাঁদছেন এবং ফটো সাংবাদিকদের ক্যাপশনেই তা ফুটে উঠবে।
মর্গে গিয়ে লাশ দেখার সময় শেখ হাসিনা রুমাল ধরে রাখেন এবং সাংবাদিকরা বহু ছবি তোলেন। গাড়িতে ওঠার পর গাড়িচালক জালাল বলেন, ফটো সাংবাদিকরা আর নেই। তখন শেখ হাসিনা রুমাল নামিয়ে স্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। বাসায় ফিরে তিনি বলেন, লাশ দেখে এসেছেন, তাই বেশি খাবেন। পরে তিনি গান গাইতে গাইতে নাচতে থাকেন এবং স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি খাবার খান।
আজ সোমবার (১৭ নভেম্বর) বেলা ১১টায় ট্রাইব্যুনাল-১ এ শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আরেক আসামির বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। আদালতের রেজিস্ট্রার কার্যালয় জানায়, গত ১৩ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল রায় ঘোষণার দিন ধার্য করে। প্যানেলে আছেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য-জেরা শেষ হয়। আরও ৯ কার্যদিন চলে প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্সের যুক্তি-খণ্ডন। প্রসিকিউশন শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেছে। রাজসাক্ষী হওয়ায় আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তার আইনজীবী খালাস দাবি করেন। রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন বিশ্বাস প্রকাশ করেন যে শেখ হাসিনা ও কামালও খালাস পাবেন।