সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫৮ পূর্বাহ্ন
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চলতি (নভেম্বর) মাসের শেষে দেশে ফিরতে পারেন বলে জানিয়েছেন দলটির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা। দেশে ফিরে ভোটার হওয়ার কথা রয়েছে তার। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নতুন কাউকে ভোটার করবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেক্ষেত্রে দেশে এসে ভোটার হতে হলে তারেক রহমানকে তফসিলের আগেই ফিরতে হবে।
২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথমবারের মতো ছবিসহ ভোটার তালিকা করা হয়। ওই সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ছিলেন লন্ডনে। ফলে ভোটার হতে পারেননি তারা। জুবাইদা কয়েক মাস আগে ভোটার হলেও দেশে না ফেরায় এখনো ভোটার নন তারেক। লন্ডনেও তিনি ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেননি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের নিবন্ধন ও প্রবাসী শাখা সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গেলে তারেক রহমানকে অবশ্যই ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্র করা লাগবে। সে অনুযায়ী তিনি ভোটার হবেন। তফসিল ঘোষণার আগে যদি তিনি দেশে ফিরে ভোটার না হন তাহলে আইনি জটিলতায় পড়বেন। তফসিল হলে সব ধরনের মাইগ্রেশন ও ভোটার কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এছাড়া কোর্ট থেকে ডিক্লারেশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ পাঁচ কমিশনার একমত হলেই তফসিলের পরে কাউকে ভোটার করা যায়। তবে সে প্রক্রিয়া অনেক জটিল। সহজ ও সাধারণভাবে তারেক রহমান ভোটার হতে চাইলে অবশ্যই তফসিল ঘোষণার আগে দেশে ফিরতে হবে।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের নিবন্ধন ও প্রবাসী শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘তারেক রহমান দেশে এসে ভোটার হতে চাইলে তফসিলের আগেই ফিরতে হবে। যুক্তরাজ্যের লন্ডন, বার্মিংহাম ও ম্যানচেস্টারে ভোটার কার্যক্রম চালু আছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি লন্ডনে ভোটার হবেন না। বাংলাদেশে এসেই ভোটার হবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’
তফসিলের পরে ভোটার হওয়া যায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তফসিলের পরে ভোটার হওয়া খুব কঠিন। কোর্ট থেকে ডিক্লারেশন লাগবে। এছাড়া ফুল কমিশন বৈঠক করে সবাই একমত হলেই কেবল ভোটার হওয়া যায়। পাঁচ কমিশনের মধ্যে একজন যদি দ্বিমত পোষণ করেন তবে তিনি আর ভোটার হতে পারবেন না।’
• অনলাইনে পূরণ করা আবেদনপত্র (নিবন্ধন ফরম-২ক)
• বাংলাদেশি জন্মনিবন্ধন সনদের কপি (অনলাইন ভেরিফায়েড)
•মেয়াদ সম্বলিত বাংলাদেশি পাসপোর্টের কপি/মেয়াদোত্তীর্ণ বাংলাদেশি পাসপোর্টের কপি/বিদেশি পাসপোর্টের কপি/সংশ্লিষ্ট দেশে বসবাসকারী তিনজন বাংলাদেশি এনআইডিধারী ব্যক্তির বাংলাদেশি নাগরিক মর্মে (নির্ধারিত ফরমে) প্রত্যয়নপত্র
• আবেদনকারীর পিতা-মাতার এনআইডির কপি/বাংলাদেশি অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদের কপি/বাংলাদেশি মৃত্যু সনদের কপি (মত হলে)/পাসপোর্টের কপি/ওয়ারিশ সনদের কপি/বাংলাদেশের বাসিন্দা মর্মে নাগরিক।
• পাসপোর্ট সাইজের এক কপি রঙিন ছবি
• শিক্ষা সনদের কপি, নিকাহনামা, স্বামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র, আবেদনকারীর নাগরিকত্ব সনদ (কাউন্সিলর চেয়ারম্যান/মেয়র/সিইও/প্রশাসক থেকে সত্যায়িত, সংশ্লিষ্ট ঠিকানা সম্বলিত ইউটিলিটি বিলের কপি/হোল্ডিং ট্যাক্স রসিদ
• মিশন অফিস থেকে প্রাপ্ত অ্যাপয়নমেন্ট অনুসারে নির্ধারিত তারিখে সশরীরে উপস্থিত হয়ে আবশ্যকীয় দলিলাদি নিবন্ধন কেন্দ্রে (সংশ্লিষ্ট মিশন অফিসে) জমা দিতে হবে এবং ছবি ও বায়োমেট্রিক (দশ আঙুলের ছাপ, আইরিশ, স্বাক্ষর) দিতে হবে। বর্ণিত প্রয়োজনীয় অন্য দলিলাদিও নিবন্ধন কেন্দ্রে জমা দেওয়া যাবে, তবে নিবন্ধন কেন্দ্রে সম্ভব না হলে, আবেদনকারীর পক্ষে বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রতিনিধির মাধ্যমে উক্ত দলিলাদি তদন্তকারী কর্মকর্তা তথা রেজিস্ট্রেশন অফিসারের (সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসার) কাছে দিতে হবে
• এছাড়া প্রবাসীদের জন্য নির্ধারিত ফরমে দেওয়া তথ্যাদির ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ভোটার এলাকার উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসারের সরেজমিনে তদন্ত প্রতিবেদন আবশ্যক
চলতি বছরের ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেন ১২ হাজার ৪৯৮ জন যুক্তরাজ্য প্রবাসী। এর মধ্যে থেকে সব প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্তভাবে ভোটার হয়েছেন পাঁচ হাজার ৭৪৯ জন। তবে এই তালিকায় নাম নেই তারেক রহমানের। যুক্তরাজ্যের লন্ডন, বার্মিংহাম ও ম্যানচেস্টারেও ভোটার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে তারেক রহমান সেখানে ভোটার হাওয়ার জন্য এখনো আবেদন করেননি বলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের নিবন্ধন ও প্রবাসী শাখা থেকে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লন্ডনে প্রবাসীদের ভোটার হতে গেলে আবেদনকারীকে অবশ্যই লন্ডনের নির্বাচন অফিসে আসতে হবে। কারণ আবেদনকারীর স্বাক্ষর, ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ বাধ্যতামূলক।
ইসির সবশেষ তথ্য অনুযায়ী সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান ও আমেরিকাসহ মোট ১১টি দেশে ভোটার কার্যক্রম চলমান। ১১টি দেশের ২১টি স্টেশনে মোট আবেদন পড়েছে ৬৯ হাজার ৬৬২ জনের। এর মধ্যে মোট ভোটার হয়েছেন ২৫ হাজার ৮৫৯ জন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সম্ভাব্য সময় ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে এবং ভোটগ্রহণ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হবে।
গত ১ নভেম্বর বিকেলে পটুয়াখালী সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে নির্বাচনের জন্য একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। আমরা রমজান মাসের আগেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাই।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইসিতে বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চলমান। সংলাপ শেষেই চূড়ান্তভাবে সম্ভাব্য তফসিল ঘোষণা করা হবে। তফসিল ঘোষণার জন্য সব কাজ এগিয়ে নিচ্ছে ইসি। ইসির তফসিল ঘোষণার আগেই দেশে ফিরতে হবে তারেক রহমানকে।
তবে বিএনপি সূত্র জানায়, নভেম্বর মাসের শেষ দিকে অথবা ডিসেম্বর মাসের শুরুতে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চলতি (নভেম্বর) মাসের শেষ দিকে দেশে ফিরতে পারেন বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা আশা করছি এ মাসের শেষ নাগাদ তিনি দেশে ফিরতে পারেন। না হলে কমপক্ষে দু-একদিন এদিক-ওদিক হতে পারে হয়তো।
সালাহউদ্দিন আহমদের কথা ঠিক থাকলে তফসিল ঘোষণার একেবারে মাহেন্দ্রক্ষণে ভোটার হবেন তারেক রহমান। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থী ঘোষণা করছে বিএনপি। প্রাথমিকভাবে ২৩৭ আসনে (পরে একটি স্থগিত) প্রার্থী দিয়েছে দলটি। এতে বগুড়া-৬ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনি।