শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৪ অপরাহ্ন
আপনারা ছাত্রশিবিরকে ভয় দেখাবেন না, ছাত্রশিবিরকে ভয় দেখিয়ে কেউ বাংলাদেশে টিকতে পারে নাই’—মন্তব্য করেছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির আয়োজিত নবীন বরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এসময় ডাকসু ভিপি বলেন, ‘খুনি হাসিনা ছাত্রশিবিরের ওপর বর্বরোচিত নির্যাতন চালিয়েছিল। সর্বশেষ ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ পর্যন্ত করেছিল। কিন্তু শিবির থেকে গেছে মানুষের হৃদয়ে, আর হাসিনা পালিয়েছে দিল্লিতে। ছাত্রশিবির দেশের মানুষের ন্যায়ের পক্ষে, আজাদীর জন্য সবসময় লড়ে গেছে এবং যাবে। একই সঙ্গে শিবির যদি কোনো অন্যায় করে তাহলে আপনারা প্রতিবাদ করবেন। সকল ছাত্র সংগঠনকে অনুরোধ করবো—ইসলামী ছাত্রশিবির যে নতুন ধারার রাজনীতি করছে তা আপনারা অনুসরণ করুন।’
আওয়ামী লীগকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকের এই নবীন বরণ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করবো—খুনি হাসিনাকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে, তার ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে। তার সাথে যারা ছিল তাদেরও বিচার করতে হবে। দেশের বিচার বিভাগ, সচিবালয়, আইন বিভাগে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। যারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইবে তাদেরকে আপনারা প্রতিহত করবেন। এই দেশে হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার নেই। আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়—এরা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি। বাংলাদেশে রাজনীতি করবে তারা—যারা বাংলাদেশপন্থী। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হয়নি; কারণ এটি ব্রিটিশ ও ভারতের প্রেসক্রিপশনে তৈরি।’
রাবি শিক্ষার্থীদের ত্যাগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে রাবি শিক্ষার্থীদের ত্যাগ–কুরবানির গল্প শুনে বড় হয়েছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ওপর ইতিহাসের বর্বরোচিত মিডিয়া ট্রায়াল হয়েছিল। বিগত ফ্যাসিবাদী সময়ে এই সুন্দর ক্যাম্পাস ছিল না। গণরুম, গেস্ট রুমের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চলতো। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার হরণ করা হতো। কেউ ইসলাম চর্চা করতে পারতো না। যারা করতো তাদের ট্যাগিং করা হতো এবং নির্যাতন করা হতো। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই—তোমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে আর কোনো নব্য ফ্যাসিস্ট জন্মাতে পারবে না। তোমাদেরকে বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার উপযোগী হয়ে গড়ে উঠতে হবে।’
অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান ও গবেষণার চর্চা হবে। মানুষ তৈরি হবে। বিগত সময়ে আমরা শিক্ষকদের নোংরা রাজনীতি দেখেছি। আমাদের অনেক ভাই শহীদ হওয়ার পেছনে শিক্ষকেরা জড়িত ছিল। জুলাইকে নিয়ে একটি শ্রেণী ব্যবসা শুরু করেছে। আগে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করতো, এখন জুলাই নিয়ে করছে। জুলাই সবার ছিল, আছে। কেউ জুলাই নিয়ে ব্যবসা করতে পারবে না। একজন মারা গেছে, আরেকজন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে। জুলাই কারো একার না—এটা সকলের।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আমরা নোংরা রাজনীতি দেখেছি, “ভাই পলিটিক্স” দেখেছি। অনেকের ক্যারিয়ার নষ্ট হয়েছে শুধু ভাইয়ের পেছনে ছুটতে ছুটতে। পড়াশোনা বাদ দিয়ে ভাই রাজনীতিতে লিপ্ত হতো। আগামীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আর এই ভাই রাজনীতি চলবে না।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাকসু ও চাকসু ভিপি সাদিক কায়েম এবং ইব্রাহিম হোসেন রনি।
প্রধান আলোচক ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।
এছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সমাজসেবা সম্পাদক আব্দুল মোহাইমিন, কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেন, বিভিন্ন অনুষদের ডিন ও হল প্রভোস্ট, শাখা ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং প্রায় সাড়ে তিন হাজার নবীন শিক্ষার্থী।