শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১০ অপরাহ্ন
যুক্তরাষ্ট্রের ডানপন্থি প্রভাবশালীরা নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে তাকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) তারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব মনগড়া বার্তা ব্যাপক ভিউ পেয়েছে, কিন্তু তা পুরো মিথ্যা।
৩৪ বছর বয়সী মামদানি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় ব্যক্তি, যিনি দেশের সবচেয়ে বড় শহরের নেতৃত্বে নির্বাচিত হয়েছেন। তীব্র রাজনৈতিক আক্রমণ ও ধর্মীয় বিদ্বেষের মুখেও তিনি এবারের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেন।
ইলন মাস্কের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) তার বিরুদ্ধে একের পর এক ভুয়া তথ্য প্রচার করে আসছে কিছু অ্যাকাউন্ট। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে ‘অপারেশন ম্যানহাটন প্রজেক্ট’ শিরোনামে একটি বার্তা ছড়ানো হয়, যা প্রকাশ করা হয় আইএসের নামে। তাতে বলা হয়, ‘মার্কিন আগ্রাসনের’ জবাবে নিউইয়র্ক সিটিতে নির্বাচনের দিন একটি হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এই ভুয়া বার্তাটি মামদানির সঙ্গে যুক্ত করে ছড়ান মার্কিন ডানপন্থি প্রভাবক লরা লুমার, যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তিনি এক্সে লিখেন, মুসলমানরা নিউইয়র্কে মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আনন্দ উদযাপনের জন্য আইএস হামলার চেয়ে ভালো উপায় ভাবতেই পারে না। এই পোস্টটি দুই লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে।
এরপর আরও অনেক রক্ষণশীল অ্যাকাউন্ট ওই বার্তাটিকে সত্য দাবি করে প্রচার শুরু করে, যেন আইএস মামদানিকে সমর্থন জানিয়েছে। এসব পোস্ট মিলে সামাজিক মাধ্যমে লাখ লাখবার দেখা হয়।
কিন্তু গবেষকরা জানান, কথিত ওই বার্তাটি সম্পূর্ণ জাল। এতে আইএস-ঘনিষ্ঠ সংবাদ সংস্থা ‘আমাক নিউজ এজেন্সি’র লোগো ব্যবহার করা হলেও তা ভুয়া।
তথ্য-যাচাই সংস্থা নিউজগার্ড ও মার্কিন গবেষক মেইলি ক্রিয়েজিস বলেন, এই বার্তাটি আমাকের প্রচলিত ধাঁচে তৈরি নয়। আইএস তাদের ঘোষণায় সাধারণত হামলার দায় স্বীকার করে বা ঘটনার তথ্য দেয়, কিন্তু এমন হুমকিসূচক ভাষা ব্যবহার করে না।
আরেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনফরমেশন এপিডেমিওলজি ল্যাব জানায়, প্রচারিত ওই নথিটি আইএসের প্রচলিত ভাষা, শৈলী, বিন্যাস ও প্রকাশপদ্ধতির সঙ্গে ‘তীব্রভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ’।
গবেষকদের মতে, ভুয়া বিবৃতিটি প্রথম প্রকাশ পায় ডানপন্থি চক্রান্তকারীদের জনপ্রিয় অনলাইন বোর্ড ৪চ্যান-এ, যেখান থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে এক্সে।
মামদানি দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের পক্ষে সোচ্চার, একই সঙ্গে ইহুদি বিদ্বেষ ও ইসলামবিদ্বেষের তীব্র সমালোচক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর থেকে তিনি নিজেও ইসলামবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
নিউইয়র্ক রাজ্যের এই আইনপ্রণেতা নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট সমাধানের অঙ্গীকার করে ভোটারদের আকৃষ্ট করেছিলেন। তবে নির্বাচনের আগে থেকেই তাকে ঘিরে বর্ণবাদী প্রচারণা ও ভুয়া খবর ছড়ানো হয়।
সংবাদ সংস্থা এএফপির তথ্য যাচাই বিভাগ নির্বাচনের আগের কয়েক সপ্তাহে মামদানিকে নিয়ে একাধিক ভুয়া দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে। এর মধ্যে ছিল এক অ-নাগরিক তার হয়ে ভোট দিয়েছে, কিংবা তার এক প্রচারকর্মী নাৎসি প্রতীকের পাশে ছবি তুলেছেন এমন দাবিও।
শেষ পর্যন্ত গবেষকরা একমত হয়েছেন যে মামদানিকে আইএসের সঙ্গে যুক্ত করার এই প্রচারণা ছিল সুপরিকল্পিত বিভ্রান্তি ছড়ানোর একটি উদাহরণ।
সূত্র: এএফপি