বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:০৭ অপরাহ্ন

‘নো হাংকি পাংকি’, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট লাগবেই: ডা. তাহের

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগেই হতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও গণভোট আয়োজনে কোনো বাঁধা নাই। সুতরাং সময় আছে। আমরা আপনাদের চালাকি বুঝি। আরও ১৫ দিন সময়ক্ষেপণ করবেন? করেন, গণভোটের সময় থাকবে। সুতরাং যা বোঝাতে চাই বুঝে নিন। নো হাংকি পাংকি।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) পৌনে ১২ টায় রাজধানীর পল্টন মোড়ে যুগপৎ আন্দোলনরত ৮ দলের সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

এদিন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি, নভেম্বরে গণভোটসহ ৫ দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারক লিপি প্রদানের লক্ষ্যে মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে পথযাত্রা নিয়ে পল্টন মোড় এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে দলগুলো। সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যমুনার অভিমুখে যাত্রা শুরু করে জামায়াতসহ অন্যান্য আটটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ডা. তাহের বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, জুলাই আগস্টের রক্তই হবে শেষ রক্তদান। এইসময়ের শাহাদাতই হবে শেষ শাহাদাত। আমরা আশা করেছিলাম, জুলাই বিপ্লবের পরে দাবি আদায়ে আর রাজপথে নেমে আসতে হবে না। কিন্তু আমরা আশাহত হয়েছি। অল্প সময়ের ব্যবধানেই আমাদের রাজপথে আসতে হয়েছে।

হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে এই জামায়াত নেতা বলেন, আমরা রাজপথে এসেছি, প্রয়োজনে রক্ত দেব, প্রয়োজনে জীবন দেব, কিন্তু আমরা জুলাই বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেব না। ষড়যন্ত্রকারীদের পরাজয় হবে। জুলাই সনদ বাংলার মাটিতে হুবহু সেটাই আইনি ভিত্তি দিতে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, আপনারা চালাকি শুরু করেছেন। এই বলবো, সেই বলবো বলে জাতীয় নির্বাচনের সময় ফেব্রুয়ারির কাছাকাছি চলে আসছেন। আমরা আপনাদের চালাকি বুঝি। আপনাদের চালাকির ভিত্তিতেই দাবি আদায়ের পন্থাও আবিষ্কার করা হবে। আমরা এখানো নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনে আছি। সোজা আঙুলে যদি ঘি না উঠে তাহলে আঙুল বাঁকা করবো। কিন্তু ঘি আমাদের লাগবেই।

ডা. তাহের বলেন, সময়ক্ষেপণ! এই চালাকি আপনাদের বিপদে ফেলবে। গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগেই হতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও গণভোট আয়োজনে কোনো বাঁধা নাই। সুতরাং সময় আছে। আরও ১৫ দিন সময়ক্ষেপণ করবেন? করেন, গণভোটের সময় থাকবে। সুতরাং যা বোঝাতে চাই বুঝে নিন। নো হাংকি পাংকি।

বিএনপি নেতাদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, শুধুই বলেন—গণভোট আয়োজনে নাকি অনেক টাকা খরচা হবে। একদিনে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয় তা দিয়ে একটা গণভোট আয়োজন করা যায়। প্রত্যেকদিন একটা করে গণভোট আয়োজন করলেও সমস্যা হবে না। তাই সরকারকে বলবো, আর যারা চাঁদাবাজিতে জড়িত তাদের বলবো, এসব বন্ধ করেন, তাহলে গণভোট আয়োজনে টাকার অভাব হবে না।

জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, আমরা শান্তি চাই, সমাধান চাই, আমরা জাতীয় নির্বাচন চাই। আমরা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন চাই। যদি বুঝতে কষ্ট হয়, তাহলে আসেন বসি আলোচনা করি। সরকারও তো আলোচনা করতে বলেছে।

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আলোচনার চাপটা তো সরকারকেই নিতে হবে। আলোচনার জন্য একটা রেফারির ভূমিকার দরকার আছে। সেই ভূমিকাটা সরকারকে নিতে হবে।

জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে আলোচনার জন্য দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেছে উল্লেখ করে ডা. তাহের বলেন, আপনারাও কমিটি ঘোষণা করুন। সময়ক্ষেপণের পলিসি বাদ দিয়ে আলোচনার পলিসি ঠিক করুন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাননি বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, চেষ্টা করেছি, ফোনে পাই নাই। আজকের কর্মসূচির পর আমি আবারো চেষ্টা করবো। ওনাকে আমরা ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করবো, বিএনপিও যেন আলোচনার পরিবেশ তৈরি করেন।

আর সময়ক্ষেপণ না করার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, আর হিংসে, রাজনৈতিক বিদ্বেষ নয়, অন্যের বিরুদ্ধে লড়াই নয়। জাতি মনে করে শুধু জুলাই সনদ নয়, সব ঠিক করা সম্ভব রাজনৈতিক সমঝোতায়।

তিনি বলেন, জাতির কাছে ওয়াদা করতে হবে, শুধু জুলাই সনদ নয়, জাতীয় নির্বাচন কিভাবে হবে? আমার দল কোথাও ভোটকেন্দ্র দখল করবে না, যদি করে তাহলে সেই আসনের ভোট বাতিল হবে। সকল দলকে একথা বলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে বলতে হবে, যেখানে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, সেরকম যদি একাধিক আসন হয় তাহলে নির্বাচনকে ভন্ডুল করে দিবো। নতুন নির্বাচন হবে। এইকথা জাতিকে বলতে হবে। কারণ ৫৪ বছরে সঠিক কোনো নির্বাচন আমরা পাই নাই। জাতি আর কোনো প্রহসনের নির্বাচনকে আর মেনে নেবে না। সুতরাং নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয় তাহলে দেশ আবার অন্ধকারে যাবে, শেখ হাসিনার যুগে চলে যাবে।

প্রশাসন একটি দলের আজ্ঞাবহ হয়ে নির্বাচনকে নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে ডা. তাহের বলেন, প্রভাবিত করা নির্বাচন জনগণ মেনে নিবে না। প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রতি নির্বাচনি লেভেল ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবি তিনি।

তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আজকে স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দেবার পরও যদি দাবি মানা না হয়, অবস্থার উন্নতি না হয় তাহলে আগামী ১১ তারিখ চলো চলো ঢাকা চলো কর্মসূচি। আগামী ১১ তারিখ হবে ঢাকা মহানগরী হবে জনতার নগরী, দাবি আদায়ের ১১ তারিখ।

লড়াই হবে, লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই—স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন তিনি।

এ সময় মঞ্চে যুগপৎ আন্দোলনে শরিকদল—ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির (বিডিপি) নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved bijoykantho© 2025