মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৩৪ পূর্বাহ্ন

সবচেয়ে দামি দোয়া

সবচেয়ে দামি দোয়া যা কোরআনে বর্ণিত হয়েছে এবং নবীজি (সা.) সবচেয়ে বেশি করতেন:

اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাহ ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাহ ওয়া কিনা আযাবান নার।

অর্থ: হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করুন। (সুরা বাকারা: ২০১) (সহিহ বুখারি: ৬৩৮৯)

কেন এ দোয়াটি সবচেয়ে দামি

এ দোয়াটিকে নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বেশি গুরুত্ব দেওয়া বা পছন্দ করার কারণ হলো, এ দোয়াটিতে একইসাথে দুনিয়ার কল্যাণ, আখেরাতের কল্যাণ প্রার্থনা করা হয়েছে এবং জাহান্নাম থেকেও মুক্তি প্রার্থনা করা হয়েছে। আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ‘জাওয়ামে’ অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ বা সব মুসলমানদের কল্যাণ প্রার্থনা অন্তর্ভুক্ত থাকে এমন দোয়া পছন্দ করতেন এবং এ রকম দোয়া ছাড়া অন্যান্য দোয়া পরিহার করতেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৪৮২)

একজন মুসলমানের যেমন দুনিয়াদার হওয়ার সুযোগ নেই, শুধু দুনিয়ার জীবন-সর্বস্ব চিন্তা ভাবনা, কাজকর্ম করার সুযোগ নেই, দুনিয়াবিরাগী হওয়ার শিক্ষাও ইসলাম দেয় না। ইসলাম আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বলে, পাথেয় সংগ্রহ করতে বলে দুনিয়ায় উত্তমরূপে জীবন যাপনের মাধ্যমে, দুনিয়া ত্যাগ করে বা দুনিয়ার জীবনে, সংসারে অমনোযোগী হওয়ার মাধ্যমে নয়। দুনিয়ার জীবনে দায়িত্বশীলতা, স্ত্রী-সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা, তাদের ভরণ-পোষণের ব্যয় নির্বাহের জন্য মানুষ যে পরিশ্রম করে, উপার্জন করে আল্লাহর কাছে তাও নেক কাজ হিসেবেই গণ্য হয়।

তাই দোয়া করার সময়ও আখেরাতের কল্যাণের পাশাপাশি দুনিয়ার কল্যাণও প্রার্থনা করা উচিত। এটাই সুন্নত ও নবিজির (সা.) শিক্ষা। আল্লাহর কাছে আখেরাতের বদলে দুনিয়ার শাস্তি বা দুনিয়ার অকল্যাণ প্রার্থনা করা ইসলামের শিক্ষা নয়।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একবার খুব অসুস্থ এক ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করেছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি দোয়া করেছিলাম, আল্লাহ যেন আমাকে আখিরাতে শাস্তি না দিয়ে আমার অপরাধের শাস্তি এই দুনিয়াতেই দিয়ে দেন!

আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, ওই শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতা আপনার নেই। আপনি বরং দোয়া করুন, হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করুন! (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৯৪১)

কোরআনে বর্ণিত আরও ৪টি দামি দোয়া

১. যে দোয়া পড়ে ক্ষমা পেয়েছিলেন আদম (আ.)

رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ

উচ্চারণ: রাব্বানা জালামনা আনফুছানা ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা লানাকূনান্না মিনাল খাসিরীন।

অর্থ: হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন, তাহলে তো আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব। (সুরা আরাফ: ২৩)

২. যে দোয়া পড়ে সুস্থতা লাভ করেছিলেন আইয়ুব (আ.)

انِّیۡ مَسَّنِیَ الضُّرُّ وَ اَنۡتَ اَرۡحَمُ الرّٰحِمِیۡنَ

উচ্চারণ: ইন্নী মাসসানিয়ায যুররু ওয়া আনতা আরহামুর রাহিমীন।

অর্থ: আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি, আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু! (সুরা আম্বিয়া: ৮৩)

৩. যে দোয়া পড়ে মহাবিপদ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন ইউনুস (আ.)

لَّا اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنۡتَ سُبۡحٰنَکَ اِنِّیۡ کُنۡتُ مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনাজ জোয়ালিমীন।

অর্থ: আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, আপনি পবিত্র ও মহান, নিশ্চয়ই আমি সীমালঙ্ঘনকারী। (সুরা আম্বিয়া: ৮৭)

৪. যে দোয়া পড়ে সন্তান লাভ করেছিলেন জাকারিয়া (আ.)

رَبِّ هَبۡ لِیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ ذُرِّیَّۃً طَیِّبَۃً ۚ اِنَّکَ سَمِیۡعُ الدُّعَآءِ

উচ্চারণ: রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা যুররিয়াতান ত্বাইয়েবাতান; ইন্নাকা সামিউদ-দুয়া।

অর্থ: হে আমার রব! আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন, আপনি আপনি দোয়া শ্রবণকারী। (সুরা আলে ইমরান: ৩৮)

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved bijoykantho© 2025