মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
জুলাই সনদ তৈরির প্রক্রিয়া ও বাস্তবায়নের রূপরেখা জোট হলেও নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন চায় জামায়াত ২৮ অক্টোবর নিহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি শিবির সভাপতির নির্বাচনের আগে গণভোটের সুযোগ নেই: আমীর খসরু লাশের ওপর নাচানাচি করে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা:গোলাম পরোয়ার আইন উপদেষ্টাকে চিঠি জোটের নির্বাচনে প্রতীক ব্যবহারে আগের বিধান বহাল চায় বিএনপি তুরস্কে ৬ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্প মায়ের ত্যাগ তুলে ধরে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে বললেন তারেক রহমান স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জামায়াতে ইসলামী আপসহীন,: মুহাম্মদ শাহজাহান আলোচনায় জামায়াত আমিরের যুক্তরাষ্ট্র সফর

আলোচনায় জামায়াত আমিরের যুক্তরাষ্ট্র সফর

বাাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। সেখানে বিভিন্ন নাগরিক সংবর্ধনা ও কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তিনি।

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জামায়াতে ইসলামীর আমিরের এ সফর বেশ তাৎপর্যময়। বিশেষ করে গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একধরনের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা বেশ কয়েকবার জামায়াতের আমির ও দলটির নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে দেখাও করেছেন।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অন্তর্বর্তী সরকারের এমন প্রতিশ্রুতিতে দৌড়ঝাঁপ বেড়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটভুক্ত দলগুলো ছাড়া ভোটের মাঠে সরব বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও অন্য দলগুলো। ভোটের রাজনীতিতে থেমে নেই নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি)। ফলে এসব দলের নেতাদের কার্যক্রম সবার নজরে এখন। যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন জামায়াত আমির। তার সেসব বক্তব্য নিয়েও চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।

ওমরাহ পালনের উদ্দেশে গত ১৯ অক্টোবর সৌদি আরব যান ডা. শফিকুর রহমান। এরপর সেখান থেকে ২২ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান তিনি। ২৩ অক্টোবর নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন জামায়াত আমির। সেখানে দেশটির কোনো শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই প্রশ্নটির উত্তর বৃহত্তর স্বার্থে আপাতত এড়িয়ে যাচ্ছি।’

জামায়াত আমিরের সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক একজন সাথী ও বর্তমান জামায়াতের কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমির সাহেব এসেছেন নির্বাচনকেন্দ্রিক কিছু কাজে। জামায়াত-শিবিরের জনশক্তি ছাড়াও এখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটির অনেকেই তার সঙ্গে দেখা করেছেন।’

কূটনৈতিক কী কী কার্যক্রম রয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটা দলের প্রধান আমেরিকা এসেছেন। তাই কূটনৈতিক কার্যক্রম তো থাকবেই। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও থাকবে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে ইন্টারনাল কিছু প্রোগ্রামও হয়েছে। সেসব সম্পন্ন করেই তিনি যুক্তরাজ্য যাবেন।

 

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ঢাকা মহানগর পশ্চিম ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক একজন সাথী মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, জামায়াত আমির এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসেছেন। ছাত্রশিবির ও জামায়াতে ইসলামীর উল্লেখযোগ্য জনশক্তি এখানে রয়েছে। তার জন্য আয়োজিত প্রতিটি সংবর্ধনায় ৪০০ থেকে ৫০০ জন উপস্থিত ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, প্রবাসীদের ভোট প্রয়োগের জন্য জামায়াতের অনেক অবদান ছিল। নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মসূচিও ছিল। এখানে অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সব মিলিয়ে এটা গুরুত্বপূর্ণ সফর।

এদিকে, জামায়াত আমিরের সফর নিয়ে রাজনৈতিক বিভিন্ন মহলে জামায়াতের নির্বাচনকেন্দ্রিক তহবিল সংগ্রহের কথাও উঠেছে।

তবে জামায়াতে ইসলামীর একটি সূত্র জাগো নিউজকে জানিয়েছে, ডা. শফিকুর রহমান দলের প্রধান। তার সফরে এসব বিষয় নেই। এর আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জাতিসংঘের প্রোগ্রামে এসেছিলেন জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তার সফরে জামায়াত-শিবিরের লোকজনের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহের কিছু কাজ ছিল। এটা জামায়াতের স্বাভাবিক বিষয়। জামায়াতের জনশক্তি নিয়মিতই সংগঠনের জন্য ব্যয় করেন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দলীয় কাজ ছাড়াও জামায়াতে ইসলামীর আমিরের যুক্তরাষ্ট্র সফরে দলের বিশেষ উদ্দেশ্য থাকতে পারে। বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এর কূটনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। এ সফরে জামায়াত হয়তো ওয়াশিংটন বা লন্ডনের নীতিনির্ধারক মহলে তাদের বার্তা পৌঁছাতে পারে। তখন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এর প্রভাব পড়তে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, ফেব্রুয়ারিতে যেহেতু নির্বাচন হচ্ছে, তার আগে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি দুটো দেশে একটা রাজনৈতিক দলের প্রধানের সফর অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে জামায়াতের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। সেখানে নির্বাচনের আগে তাদের সাংগঠিক কাজ, পরিকল্পনা ও নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মসূচি তারা করতে পারে।

অধ্যাপক রুহুল আমিন বলেন, জামায়াত ডিপ্লোমেটিকভাবে কারও সঙ্গে দেখা করলে সেটা তারা নির্দিষ্টভাবে বলবে না। কিন্তু এসব সফরে সাধারণত ডিপ্লোমেটিক কর্মসূচি থাকে। এমনও হতে পারে জামায়াত না চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ কিংবা বৈঠক হবে। কারণ দুই পক্ষের স্বার্থ রয়েছে। এটা বিশ্বরাজনীতির বাস্তবতা।

এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর দলীয় সূত্র বলছে, এটি সম্পূর্ণ সাংগঠনিক সফর। দলের আমির সেখানে অবস্থানরত জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় করবেন। সফর শেষে তিনি যুক্তরাজ্যে যাবেন। সেখানে সাংগঠিক কাজ শেষে আগামী ৩ নভেম্বর (সম্ভাব্য) দেশে ফিরবেন।

জামায়াতের আমিরের যুক্তরাষ্ট্র সফরের কারণ জানতে চাইলে দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জোবায়ের জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ সাংগঠনিক সফর। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন কিংবা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দেখা করার কোনো কর্মসূচি নেই। সাংগঠনিক কাজ শেষে ফিরে আসবেন।’

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved bijoykantho© 2025