Editor Panel
- ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ / ৫ Time View
কিছু ঘটনা এতোটাই বিহ্বল করে যে মানুষ শোক প্রকাশের ভাষায়ও হারিয়ে ফেলে, নিস্তব্ধ হয়ে যায়। ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের বেয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার ঘটনায় নিহত আবুল কালাম আজাদের মৃত্যুও তেমনই। এই মৃত্যু গোটা দেশকেই নাড়া দিয়েছে। শোকস্তব্ধ হয়ে আছে তার পুরো গ্রাম।
কালামের জানাজা গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়ায় সম্পন্ন হয়েছে সোমবার সকালে। উপজেলার মোক্তারের চর পূর্ব পোড়াগাছা দাখিল মাদ্রাসা মাঠে তার জানা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে তার মরদেহ রাত একটার দিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়ি পৌঁছায়। কালামের জানাজায় শত শত মানুষ অংশ নেন।
জানাজা শেষে ঈশ্বরকাঠি এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে কালামকে দাফন করা হয়।
তার এমন মৃত্যুর খবরে এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। অতি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর দাবি স্বজন ও স্থানীয়দের।ঈশ্বরকাঠি গ্রামের জলিল চোকদার ও হনুফা বেগম দম্পতির ছেলে আবুল কালাম।
তার চার ভাই ও ছয় বোন। ভাইদের মধ্যে আবুল কালাম সবার ছোট। ২০ বছর আগে তার বাবা ও মা মারা যান। এরপর তিনি বড় হন বড় ভাই ও বোনদের কাছে।সংসারের স্বচ্ছলতা আনতে ২০১২ সালে মালয়েশিয়ায় যান আবুল কালাম।
সেখান থেকে ফিরে ২০১৮ সালে পাশের গ্রামের আইরিন আক্তারকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের ছয় বছরের এক ছেলে ও চার বছর বয়সী এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে আবুল কালাম নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলী এলাকায় বসবাস করতেন। ঢাকার মতিঝিলের একটি ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে কাজ করতেন। ওই কাজের জন্যই প্রতিদিন তিনি নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা যাতায়াত করতেন।প্রতিদিনের মতো রবিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ থেকে মতিঝিলে আসেন আবুল কালাম। এরপর কাজের জন্য সেখান থেকে বের হন। রবিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলারের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে যায়। সেটির নিচে চাপা পড়ে প্রাণ হারান আবুল কালাম।
আবুল কালামের মৃত্যুর খবরে শোকার্ত ঈশ্বরকাটি গ্রামের বাসিন্দারা। কান্নায় ভেঙে পড়েন গ্রামে থাকা তার স্বজনেরা।
আইরিন আক্তার প্রিয়া বলেন , আমার ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো যাচ্ছিল না। রাশিয়া পোস্টের পর থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়মিত লস হয় দিশেহারা হয়ে পড়েছিল আমার স্বামী । সব সময় চিন্তাগ্রস্ত ছিল। তবে আমাদের নিয়মিত সান্ত্বনা দিত আমাদের ছেলে মেয়েদের মানুষ করতে হবে। বিদেশের ব্যাপার অনেকের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছে। বর্তমানে বিদেশে লোকজন না পাঠানোর কারণে নিয়মিত লসের মধ্যে পড়তে হয়েছে আমার স্বামীর। ধারদেনা করেই চলতে হয়েছে আমাদের। এখন আমি কি করবো আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। ছেলে মেয়েদের কিভাবে যে মানুষ করব, কিভাবে লেখাপড়া করাবো বুঝতে পারছি না।
নিহতের জানাজায় অংশগ্রহণ করে তাদের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন শরীয়তপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জেনারেল মোঃ ইমরুল হাসান।