মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:১৯ পূর্বাহ্ন
পোস্টাল ভোটিংয়ের বিধান চালু, একক প্রার্থীর আসনে না ভোট, জামানত ৫০ হাজার টাকা, অনিয়মে পুরো আসনের ভোট বাতিলের বিধানসহ এক গুচ্ছ প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে সংশোধিত অধ্যাদেশে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) আইন পাসের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এতে পলাতক ব্যক্তিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশে ইভিএম সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রার্থীর যোগ্যতা অযোগ্যতায় পলাতক ব্যক্তিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, পলাতক ব্যক্তিরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না, সংশোধিত অধ্যাদেশে এটা যুক্ত করা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আদালত যখন পলাতক ঘোষণা করে তাদের অযোগ্য করা হয়েছে। যেদিন আদালত আপনাকে আসতে বলছে, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, আসছেন না, তখন আদালত পলাতক ঘোষণা করেন। বিচার চলাকালীনও পলাতক হয়।
প্রার্থীদের হলফনামায় এফিডেভিটের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি আয়ের উৎসের বিবরণ দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয়ের উৎস, সম্পত্তি, বিবরণ নির্বাচন কমিশনে দিতে হবে। এটা আমরা ওয়েবসাইটে পাবলিক করে দেব, এতে সবাই জানবে কার কি সম্পত্তি।
এবার ভোটে প্রার্থীদের জামানত বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা এবং একক প্রার্থীর আসনে ‘না’ ভোটের বিধান করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা।
২০১৪ সালের প্রসঙ্গ টেনে উপদেষ্টা বলেন, না ভোটের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। একজন প্রার্থী থাকলে সেখানে না ভোট হবে। ২০১৪ সালের ভুয়া সাজানো নির্বাচন যেন না হয় সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জোটভুক্ত হলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে সংশোধিত আরপিওতে। ভোটের সময় অনেকে জোটভুক্ত হলে জনপ্রিয় বা বড় দলের প্রতীকে ভোট করা যেত। এখন আর সে সুযোগ থাকছে না। উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনী জোট হলে, জোটের অংশ হলেও দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে। যাতে ভোটাররা ক্লিয়ার আইডিয়া পায় উনি কোন দলের।
নির্বাচনি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পোস্টাল ব্যালট ভোটের বিধানটি আরপিওতে যুক্ত করা হয়েছে। এবার আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং চালু করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের পাশাপাশি কারা হেফাজতে থাকা ব্যক্তি, সরকারি কর্মকর্তা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারাও ভোট দিতে পারবে।
ভোট গণনার সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি থাকার বিধানটিও যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। রাজনৈতিক দলের অনুদানের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। যিনি অনুদান দেবেন তার ট্যাক্স রিটার্নও দিতে হবে ।
অনিয়ম বন্ধে প্রয়োজনে নির্বাচনী আসন স্থগিতের বিধান যুক্ত করা হয়েছে সংশোধিত অধ্যাদেশে। আসিফ নজরুল বলেন, আগের আইনে বিধান ছিল কোনো ভোটকেন্দ্রে গণ্ডগোল হলে কেন্দ্রে ফলাফল বাতিলের। এখন ইসি যদি মনে করে একটি নির্বাচনী এলাকায়ই এত অনিয়ম হয়েছে, পুরো এলাকার ভোট বাতিল করা উচিত; তাহলে সেটি করতে পারবে। সে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।