মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:০০ অপরাহ্ন

‘চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে হতাশ না হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে’: প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আজ আমরা তারুণ্যের শক্তিকে উদযাপন করছি। এটিই আমাদের জাতির চালিকাশক্তি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যখন একটি দেশের যুবসমাজ সক্রিয় থাকে, উদ্যমী এবং উদ্ভাবনী শক্তিতে বলীয়ান হয়, তখন কোনো প্রতিবন্ধকতাই তাদের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে রাখতে পারে না।

আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের শাপলা হলে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ১২ তরুণকে ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রদান করেছেন। স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ ও তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণামূলক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ বছর পাঁচটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে তরুণদের এই সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।

পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারও রয়েছেন।প্রধান উপদেষ্টা বলেন, উপস্থিত সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজকে এখানে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। ‘ইয়্যুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’ আয়োজনের জন্য আমি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

একইসাথে, আজ যারা পুরস্কার পেয়েছো তাঁদের আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন।তিনি বলেন, আমাদের তরুণদের উদ্ভাবনী শক্তি আজ কেবল শিক্ষাক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নেই। তরুণরা স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ সুরক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায়ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এই তরুণরাই চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তরুণরাই যুগে যুগে এ দেশের ইতিহাস রচনা করেছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের চলার পথে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে, কখনো তা জনস্বাস্থ্যের সংকট, কখনো শিক্ষার অপর্যাপ্ত সুযোগ, আর কখনো পরিবেশগত বিপর্যয়।

কিন্তু এই চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে হতাশ না হয়ে বরং এগুলোকে আমাদের নিজস্ব শক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে। আমি আশা করি এ কাজেও আমাদের তরুণরা নেতৃত্ব দেবে।  স্বেচ্ছাসেবা কেবল আর্তমানবতার কল্যাণেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি আত্ম-উন্নয়ন, চরিত্র গঠন এবং নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশের এক আদর্শ মাধ্যম।তিনি বলেন, আমরা চাই, আমাদের তরুণেরা কেবল স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেই থেমে থাকবে না; সমাজের নীতি নির্ধারক, উদ্ভাবক এবং পরিবর্তনের স্থপতি হিসেবে নিজেদের তুলে ধরবে। এটি তখনই সম্ভব হবে যখন তারা আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজেদের গড়ে তুলতে পারবে, প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করবে এবং নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশে মনোযোগী হবে। আজকের এই পুরস্কার কেবল একটি স্বীকৃতি নয়, এটি তোমাদের জন্য একটি উদাত্ত আহ্বান, তোমরা আরও সাহসী হও, আরও নেতৃত্ব দাও এবং সমাজের কল্যাণে নতুন ধারণা ও উদ্ভাবন নিয়ে কাজ করো।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তোমাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। স্বাস্থ্যখাতে তোমাদের একটি ক্ষুদ্র উদ্যোগ হাজারো শিশুকে রোগমুক্ত রাখতে পারে। শিক্ষা ক্ষেত্রে তোমাদের সামান্য প্রচেষ্টা দেশের শিক্ষার মানকে বহুদূর এগিয়ে নিতে পারে। পরিবেশ রক্ষায় তোমাদের সম্মিলিত প্রয়াস আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সবুজ পৃথিবী নিশ্চিত করতে পারে। মনে রাখবে, তোমাদের প্রতিটি ছোট ছোট প্রচেষ্টাই দেশের জন্য মস্ত বড় অর্জনের পথ তৈরি করবে।

তিনি বলেন, আমি জানি, স্বেচ্ছাসেবা বা যেকোনো মহৎ উদ্যোগের পথ মসৃণ নয়। সময়, অর্থ এবং মানসিক চাপের বহুবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এর মধ্য দিয়েই আমাদের ধৈর্য, সহনশীলতা এবং নেতৃত্বের মতো মহৎ গুণাবলি অর্জন করে নিতে হবে। আমি যুবসমাজের প্রত্যেক সদস্যকে আহ্বান জানাই, তোমাদের মেধা, শক্তি এবং সৃজনশীলতা দিয়ে সমাজের ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখো। তোমাদের সাফল্য কেবল ব্যক্তিগত অর্জনে সীমাবদ্ধ না রেখে অন্যদের জন্যও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হোক। আমি বিশ্বাস করি, তরুণরা সক্রিয় থাকলে দেশের কোনো সমস্যাই আর অমীমাংসিত থাকতে পারে না।

ড. ইউনূস আরও বলেন, আমরা তোমাদের নতুন নীতি, যুগান্তকারী ধারণা এবং সামাজিক পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে দেখতে চাই। তোমাদের সম্মিলিত প্রয়াসেই বাংলাদেশ একটি উন্নত, মানবিক এবং উদ্ভাবনী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে। তোমাদের আবারও অভিনন্দন জানাচ্ছি, আমার পক্ষ থেকে, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে, দেশের সকলের পক্ষ থেকে। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024