মঙ্গলবার, ১৭ Jun ২০২৫, ০২:১২ অপরাহ্ন
ঈদুল আজহায় করণীয়
ঈদের সালাতের আগে গোসল করা সুন্নত। উত্তম পোশাক পরিধান করা সুন্নত। সুগন্ধি ব্যবহার সুন্নত। আর ঈদের দিন রাসুল (সা.) বিশেষভাবে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন।
ঈদগাহে এক পথ দিয়ে যাওয়া এবং অন্য পথ দিয়ে ফেরা সুন্নত।
সম্ভব হলে ঈদগাহে হেঁটে যাওয়াও সুন্নত। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১০৭১)
ঈদের দিন তাকবির পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালাকে বেশি বেশি স্মরণ করা সুন্নত। পুরুষরা এ তাকবির উঁচু আওয়াজে পাঠ করবে, নারীরা নীরবে পাঠ করবে। এ তাকবির জিলহজ মাসের ৯ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত পাঠ করবে। (ফাতহুল বারি : ২/৫৮৯)
ঈদের নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। ঈদের নামাজ সব নফল নামাজের মধ্যে ফজিলতপূর্ণ। ঈদের নামাজের আগে ও ফজরের নামাজের পরে কোনো নামাজ নেই। ঈদের নামাজের কোনো আজান ও ইকামত নেই।
ঈদের দিন ছোট-বড় সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত। ঈদের দিনে সাহাবায়ে কিরামদের সম্ভাষণ ছিল, ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’।
ঈদুল আজহার দিনে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। কোরবানির গোশত নিজে খাবে, নিজের পরিবারকে খাওয়াবে, আত্মীয়-স্বজনকে হাদিয়া তোহফা দেবে এবং গরিব-মিসকিনকে দান করবে।
ঈদুল আজহায় পশুর রক্ত, আবর্জনা ও হাড় থেকে যেন পরিবেশ দূষিত না হয়, সেদিকে প্রত্যেক মুসলমানের সতর্ক হওয়া উচিত। কোরবানি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্ত, আবর্জনা ও হাড় নিরাপদ দূরত্বে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দেওয়া উচিত।
ঈদগাহে যাওয়ার পথে উচ্চৈঃস্বরে তাকবির (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) পড়া। ঈদের দিন চেহারায় খুশির ভাব প্রকাশ করা। কারো সঙ্গে দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলা। আনন্দ-অভিবাদন বিনিময় করা। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৫৬-৫৮)
কোরবানি কখন ও কীভাবে করব : মোট তিন দিন কোরবানি করা যায়। ১০ জিলহজ ঈদের নামাজের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। ১০ জিলহজ কোরবানি করা সবচেয়ে উত্তম। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ৫/২৯৫)
১০ ও ১১ জিলহজ দিবাগত রাতেও কোরবানি করা জায়েজ। তবে দিনে কোরবানি করাই ভালো। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৪৯২৭)
ঈদুল আজহায় বর্জনীয়
ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। ঈদের দিনকে কবর জিয়ারতের বিশেষ দিন মনে করে জিয়ারত করা বিদআত। তবে পূর্বনির্ধারিত রুটিন ছাড়া হঠাৎ সুযোগ হয়ে গেলে একাকী কেউ জিয়ারত করলে দূষণীয় নয়।
পশুর বর্জ্য ইত্যাদি দ্বারা রাস্তাঘাট অপরিচ্ছন্ন করে রাখা উচিত নয়। এতে মানুষের কষ্ট হয়, যা বড় গুনাহ। তাই পশু জবাই করার পর রক্ত, বর্জ্য ইত্যাদি নিজ উদ্যোগে পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দুটি অভিশপ্ত কাজ থেকে দূরে থাকবে। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, অভিশপ্ত কাজ দুটি কী হে আল্লাহর রাসুল? জবাবে তিনি বলেন, মানুষের যাতায়াতের পথে অথবা (বিশ্রাম নেওয়ার) ছায়াবিশিষ্ট জায়গায় পেশাব-পায়খানা করা। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫)
অনেকে ঈদের আনন্দে মশগুল হয়ে নতুন জামাকাপড় পরিধান, সেমাই, ফিরনি ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ঈদের সালাত আদায় করার কথা ভুলে যায়। অথচ এই দিনে ঈদের সালাত ও কোরবানি করাই হচ্ছে মুসলমানদের মূল কাজ। ঈদগাহে বা ঈদের দিন সাক্ষাৎ হলে মুসাফাহা ও মুয়ানাকা করতেই হবে—এমন বিশ্বাস ও আমল করা বিদআত। তবে এমন বিশ্বাস না করে সালাম ও মুসাফাহার পর মুয়ানাকা (গলায় গলা মেলানো) করায় কোনো অসুবিধা নেই। কারণ মুসাফাহা ও মুয়ানাকা করার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি হয়।
কোরবানির গোশত, চামড়া ও এর কোনো অংশ বিক্রি করা যাবে না। অর্থাৎ বিক্রি করে নিজে উপকৃত হওয়া যাবে না। এমনকি কসাইকে পারিশ্রমিকস্বরূপ গোশত দেওয়া নিষিদ্ধ। (বুখারি, হাদিস : ১৭১৭)
তবে সাধারণভাবে তাকে খেতে দেওয়া বা হাদিয়া দেওয়ায় অসুবিধা নেই।
ঈদের দিন উপলক্ষ্যে যেখানে গানবাজনা, অবাধে নারী-পুরুষ বিচরণ ইত্যাদির আয়োজন থাকে—এমন মেলা আয়োজন করা, অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা দেওয়া সম্পূর্ণ হারাম।
মহান আল্লাহ আমাদের কোরবানি কবুল করুন।