রবিবার, ১৫ Jun ২০২৫, ০২:০৯ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
ইরানের একাধিক শহরে ফের ইসরায়েলের হামলা আটকে পড়া ইরানি হাজিদের সব ধরনের সহায়তার নির্দেশ সৌদি বাদশাহর । ইসরায়েলে দেড় শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান তেহরানে আবাসিক ভবনে ইসরায়েলের হামলায় নিহত ৬০ ইসরায়েলের হামলায় ইরানের আরও তিন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত উত্তরায় র‌্যাব পরিচয়ে ‘নগদ’ এজেন্টের কাছ থেকে কোটি টাকা ছিনতাই মামলার চাপ কমাতে আপস-মধ্যস্থতা বাধ্যতামূলক করা গুরুত্বপূর্ণ: আইন উপদেষ্টা পুলিশের কাছে রাইফেল থাকলেও মারণাস্ত্র থাকবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট ধোঁয়াশা কেটে গেছে: জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট সরকার ও বিএনপির সমঝোতা রাজনৈতিক সংকট দূর করবে: ইসলামী আন্দোলন

‘মর্যাদাপূর্ণ দেশ ও নতুন বন্দোবস্তের লক্ষ্যেই তারুণ্যের প্রত্যয়’: এনসিপির যুব উইংয়ের আত্মপ্রকাশ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব উইং জাতীয় যুবশক্তির আত্মপ্রকাশ হয়েছে। শুক্রবার (১৬ মে) বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানে শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউয়ে এক অনুষ্ঠানে সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। নবগঠিত এ সংগঠনে অ্যাডভোকেট মো. তরিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও ডা. জাহিদুল ইসলামকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।

আত্মপ্রকাশের পর সংগঠনটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. তরিকুল ইসলাম ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। ঘোষণাপত্রে তিনি বলেন, মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশ ও নতুন বন্দোবস্তের লক্ষ্যে তারুণ্যের প্রত্যয়। আমরা, জাতীয় যুবশক্তি বিশ্বাস করি যে ইতিহাসের প্রতিটি মৌলিক পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিয়েছে তরুণেরা, এবং এখন সময় এসেছে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও নতুন প্রজাতন্ত্র নির্মাণের। আমরা দাঁড়িয়ে আছি এক ধারাবাহিক লড়াইয়ের সন্ধিক্ষণে—যার সূচনা হয়েছিল ১৯৪৭ সালের উপনিবেশবিরোধী আজাদীর লড়াইয়ে, পরবর্তীতে পরিণত হয়েছে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে, আর এক নতুন দিশা ও প্রত্যয়ের জন্ম দিয়েছে ২০২৪-এর ঐতিহাসিক ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে।

ঘোষণাপত্রে বলা হয়, এ অভ্যুত্থান কেবল ক্ষোভের বিস্ফোরণ নয়— এটি ছিল একটি নতুন রাজনৈতিক কল্পনার জন্ম মুহূর্ত, যেখানে তরুণেরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে: বর্তমান ব্যবস্থা আর চলতে পারে না, প্রয়োজন এক নতুন রাষ্ট্রকল্প, এক নতুন পথ। নতুন রাষ্ট্র ও রাজনীতির আকাঙ্ক্ষাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করেছিল। যুবশক্তি জুলাই গণঅভ্যুত্থানেরই ধারাবাহিকতা।

ঘোষণাপত্রে তিনি বলেন, আমরা চাই দায় ও দরদের রাজনীতি— যেখানে নেতৃত্ব মানে দায়িত্ব গ্রহণ, সহানুভূতিশীলতা, সহনশীলতা এবং নাগরিকের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ। দায়িত্ব, সহানুভূতি ও মানবিকতা ছাড়া রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা সম্ভব নয়। দায় ও দরদের রাজনীতিই অধিকার ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করে। তাই দায় ও দরদের অনুশীলন আমাদের রাজনীতির অন্যতম নৈতিক ভিত্তি ।

তিনি বলেন, আমরা চাই এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে নাগরিক মর্যাদা কাগজে নয়, বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত হবে। যেখানে রাষ্ট্র সব ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম ও জাতিসত্তার মর্যাদা দেবে। যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কেবল স্লোগান নয়, রাষ্ট্রীয় নীতির ভিত্তি হবে। যেকোনো প্রকার ধর্মবিদ্বেষ ও উগ্রতাকে পরিহার করে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মবোধ ও সামাজিক-নৈতিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আমরা সম্প্রীতি, ইনসাফ ও নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

বাংলাদেশপন্থা আমাদের রাজনৈতিক চিন্তার স্বতন্ত্র মেরু— যা বাংলাদেশের ইতিহাস, ভূগোল, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও মানুষের সংগ্রাম থেকে উৎসারিত এক সার্বভৌম রাষ্ট্রচিন্তা। এটি একাধারে ফ্যাসিবাদবিরোধী এবং আগ্রাসনবিরোধী রাজনৈতিক পথ, কোনো গ্লোবাল শক্তির ছায়ায় নয়, বাংলাদেশের নিজস্ব দিশা, আত্মমর্যাদা ও জাতীয় স্বার্থে বিশ্বাসী। বাংলাদেশপন্থা মানে হলো এমন একটি কৌশলগত অবস্থান, যেখানে দেশের নীতিনির্ধারণ হবে দেশের ভেতরের বাস্তবতা, জনগণের চাহিদা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্নকে কেন্দ্র করে।

 

আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ কেবল একটি রাষ্ট্রিক সীমানা নয়, এটি একটি ব-দ্বীপীয় সভ্যতা। এ সভ্যতা আমাদের ভূগোলনির্ভর, বহু ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক এক ঐতিহাসিক সত্তা, যা পাহাড় থেকে নদী পেরিয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক অঞ্চলজুড়ে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও কৌশলগত শক্তি হিসেবে নেতৃত্ব নিতে হবে বাংলাদেশকে। সেই নেতৃত্বকে নিতে হলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সভ্যতাগত রূপান্তর প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন পথ দেখাবে বাংলাদেশ। আমরা চাই, একটি জাতীয় অর্থনীতি, যা কেবল প্রবৃদ্ধির হিসাব নয়, ইনসাফ ও সমতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠবে। যেখানে কাজ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি হবে সবার নাগালের মধ্যে। রাষ্ট্রে তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। তরুণরা উদ্ভাবনী শক্তি ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ পাবে। দুর্নীতিমুক্ত ও মেধাভিত্তিক একটা রাষ্ট্র কাঠামো গড়তে কাজ করবে যুবশক্তি।

তিনি বলেন, আমরা চাই গণতন্ত্র ও সুশাসনের এমন কাঠামো, যা কেবল ভোটেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং প্রতিটি সিদ্ধান্ত, আইন ও নীতিতে জনগণের অংশ নেবে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন হবে, বিচার বিভাগ দলনিরপেক্ষ হবে, স্থানীয় সরকার হবে ক্ষমতাসম্পন্ন, এবং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সরকার হবে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক।

যুবশক্তি মনে করে, নারীরা শুধুই অংশীদার নয়, তারা হবে নতুন প্রজাতন্ত্রের নেতৃত্বের মুখ। পরিবার, কর্মক্ষেত্র, রাজনীতি ও আন্দোলনে তাদের উপস্থিতি বাধাগ্রস্ত নয়— মূলধারায় প্রোথিত হবে। জাতীয় যুবশক্তি চায় এমন রাষ্ট্র, যেখানে নারীর সাহস, সিদ্ধান্ত ও সক্ষমতা বাধাহীনভাবে বিকশিত হবে। নারীর ওপর সহিংসতা নয়, নারীর হাতেই হবে সমাজ ও রাষ্ট্রের পুনর্গঠন। একই সঙ্গে আমরা স্পষ্ট করে বলি— রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব কেবল সেনাবাহিনী বা নীতিনির্ধারকদের দায়িত্ব নয়, এটি তরুণ প্রজন্মেরও রাজনৈতিক ও নৈতিক অঙ্গীকার। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তরুণদের অংশগ্রহণ এখন কৌশলগত অপরিহার্যতা। সীমান্তরক্ষা থেকে শুরু করে তথ্য-সংগ্রাম, জলবায়ু বিপর্যয়, খাদ্য ও প্রযুক্তি নিরাপত্তা—সবখানেই তরুণদের সক্রিয় ভূমিকা ছাড়া সার্বভৌমত্ব রক্ষা অসম্ভব।

বহুরূপী চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে— চাকরির সংকট, উদ্যোক্তার পথে বাধা, প্রযুক্তিহীন শিক্ষা, মাদকের ভয়াবহ বিস্তার এবং এক অন্তঃসারশূন্য বাজারনির্ভর সংস্কৃতি তরুণদের বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা চাই, এ সংকট মোকাবিলায় রাষ্ট্র বিনিয়োগ করুক সৃষ্টিশীল কর্মসংস্থান, উদ্ভাবনী উদ্যোগ ও নৈতিক শিক্ষা-প্রশিক্ষণে। প্রতিটি তরুণ যেন সিদ্ধান্ত নিতে পারে—চাকরি করবে, নাকি উদ্যোগ গড়বে এবং কোনো তরুণ যেন মাদক নয় নিজের স্বপ্নের মধ্যেই হারিয়ে যেতে শেখে। আমাদের দাবি— রাষ্ট্র এ দায় স্বীকার করুক এবং তরুণদের পাশে নৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামো গড়ে তুলুক।

এ সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আমাদের প্রধান দাবি—একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও নতুন প্রজাতন্ত্র। আমরা বিশ্বাস করি, সময় এসেছে নতুন সংবিধানের, নতুন রাজনৈতিক চুক্তির, যা এ প্রজন্মকে প্রতিনিধিত্ব করবে, যা এ প্রজন্মের মর্যাদা ও সুযোগ নিশ্চিত করবে, যা ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি, ন্যায্যতা, পরিবেশ ও প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করে এক নতুন রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবে।

ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, আমরা সেই প্রজন্ম, যারা অতীত জানে, বর্তমান দেখে, এবং ভবিষ্যৎ নির্মাণে ভয় পায় না। আমরা ৪৭-এর আজাদীর আত্মা বহন করি, ৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামের আত্মত্যাগে অনুপ্রাণিত, আর ২৪-এর অভ্যুত্থানের অঙ্গীকারে শপথবদ্ধ। আমরা কেবল উত্তরাধিকার নয়—আমরাই আগামী।

 

রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব ও হিস্যা নিশ্চিত করবে যুবশক্তি। আগামীর সংসদ ও আগামীর বাংলাদেশ হবে তরুণদের ও নতুনদের।

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024