বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত হলে নষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই: নূরুল ইসলাম বুলবুল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ‘কফিন মিছিল’ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেই ছাড়বো : হাসনাত ইসিকে সহযোগিতা করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ’ ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে যে হুঁশিয়ারি দিলেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ষড়যন্ত্র করবেন না, দ্রুত নির্বাচন দিন : গয়েশ্বর ১০ দিনের মধ্যে সয়াবিন তেলের সংকট কাটবে : বাণিজ্য উপদেষ্টা এস আলম পরিবারের ৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ আমিরাতের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানালেন- ব্রিগেঃ জেনারেল (অবঃ) আযমী

হৃদপিণ্ডের ক্রমবর্ধমান ও স্থিতিশীল এনজাইনা বা ব্যথার সন্তোষজনক চিকিৎসা

বাংলাদেশে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই বৃদ্ধির অগণিত জানা-অজানা কারণ রয়েছে। তারপরও আমাদের ভৌগলিক অবস্থান ও জীবনযাত্রার অভ্যাসগত কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। সাধারণত হৃদরোগের অসুখ বলতে আমরা হৃদযন্ত্রের অক্সিজেন বহনকারী ধমনীর সংকীর্ণতা বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যে অসুস্থতার সৃষ্টি হয় তাকে বুঝি।

এই রোগ সংক্রান্ত ACC/AHA/AATS/SCAI/STS/FDA এর নির্দেশিকা বিশ্লেষণ করলে আমরা রোগের  মূলত তিন প্রকার চিকিৎসা পদ্ধতি পেয়ে থাকি। 

প্রথমত:
নিয়মিত ঔষধ খাওয়া, যা সকল রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটা সকল স্তরের চিকিৎসা পদ্ধতির জন্য প্রযোজ্য।

দ্বিতীয়ত: 
Invasive Treatment, যেমন হৃদপিণ্ডের বন্ধপ্রায় ধমনীর মধ্যে ঢুকে এক বা একাধিক রিং (Stent/PCI) বসানো অথবা বুক কেটে বাইপাস সার্জারি (CABG) করা।

যা মূলত বিলম্ব-বিহীন, দ্রুত ও জরুরি চিকিৎসা পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। 

তৃতীয়ত:  
কোন প্রকার Invesive পদ্ধতি ছাড়াই হৃদপিণ্ডের রক্তনালীর সংকীর্ণতা বা বন্ধ হয়ে যাওয়া ধমনীর উপযুক্ত চিকিৎসা করা, যা কিনা ক্রমবর্ধমান ও স্থিতিশীল হৃৎপিণ্ডের ব্যথার রোগীর জন্য প্রযোজ্য। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো US-FDA নির্দেশিত EECP পদ্ধতি, যাকিনা বিজ্ঞানসম্মত, অত্যন্ত কার্যকারী, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বিহীন, ব্যায় সহনীয়, সহজ ও একটি নিরাপদ চিকিৎসা ব্যবস্থা। ইতিমধ্যেই EECP ইউরোপ ও আমেরিকা সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হৃৎপিণ্ডের ক্রমবর্ধমান ও স্থিতিশীল এনজাইনা বা ব্যথায় সফলতার সাথে বহুলাংশে ব্যবহার হয়ে আসছে।

 

EECP এর কার্যপদ্ধতি (Working Principal):

আমাদের হৃদপিণ্ড Systole এর সময়ে পরিশোধিত রক্তকে নির্ধারিত চাপ ও গতিতে শরীরের অগণিত ধমনীর মাধ্যমে সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে দেয় এবং Diastole এর সময় এই রক্তের গতি অনেকটাই স্থির থাকে। EECP এই Diastole এর সময় শরীরের নিচের অংশের সকল ধমনীর উপর শরীরের বাহিরে অবস্থিত Cuff এর মাধ্যমে হৃদপিণ্ডের কাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাপ সৃষ্টি করে ও রক্তকে অপেক্ষাকৃত উচ্চ চাপে দ্রুত হৃৎপিণ্ডে ফেরত পাঠায়। এই কাজটি রোগীর ক্রমাগত ECG, কম্পিউটার ও কম্প্রেসারের সমন্বিত-কার্যের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। দ্রুতগতিতে ফেরত আসা এই রক্তের তরঙ্গ হৃদপিণ্ডের করোনারি ধমনীতে উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করে ও যেখানে বাধা প্রাপ্ত হয় সেখানে একাধিক জৈব-বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে পর্যাক্রমে রক্ত চলাচলের জায়গা তৈরি করে বাধাকে অতিক্রম করে অক্সিজেন সম্বলিত রক্ত হৃদপিণ্ডের অসুস্থ জায়গায় পাঠাতে সক্ষম হয়। যার ফলশ্রুতিতে রুগীর হৃদরোগ জনিত বুক ব্যথার উল্লেখযোগ্য উপশম হয়, দৈনন্দিন কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও আগের মতো স্বাভাবিক জীবন ব্যবস্থায় ফেরত আসে।

 

EECP চিকিৎসার সফলতা:

সফল চিকিৎসার কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ সমূহে বিশেষ করে ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে এই চিকিৎসা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে ও Stable Coronary Artery Disease রোগীদের জীবন যাত্রার মানও সন্তোষজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় এই পদ্ধতি দিন দিন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্বাবধানে আমাদের দেশেও জনপ্রিয় হচ্ছে। তাই দেরি না করে stable angina বা বুক ব্যথার রোগীদের এই ব্যাপারে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে রাখা ভালো।

লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান কার্ডিওলজি ও মেডিসিন বিভাগ।
আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর ১০, ঢাকা।

 

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024