মঙ্গলবার, ১৭ Jun ২০২৫, ০২:৪৫ অপরাহ্ন
রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের সমন্বয়ে কয়েক মাস ধরে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম চূড়ান্ত করার মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়া আরও একধাপ এগোলো। শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে সাত কলেজ নিয়ে গঠিত হতে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয়েছে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (ডিসিইউ)।
বিশ্ববিদ্যালয়টি ঠিক কবে নাগাদ আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে, তা এখনো বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। নামকরণ চূড়ান্ত করার পর কাঠামো কেমন হবে, সেই রূপরেখা ঠিক করার কাজ করবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নেতৃত্বে গঠিত এ সংক্রান্ত কমিটি। প্রাথমিকভাবে যে প্রশাসনিক কাঠামো দাঁড় করানো হবে, তার প্রধান হবেন একজন অধ্যক্ষ।
ইউজিসি কর্মকর্তা ও কমিটির সদস্যরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলেও সাত কলেজের কার্যক্রম চলবে কলেজের ঐতিহ্যকে ধারণ করে। সাত কলেজের মধ্যে বর্তমানে পাঁচটিতে উচ্চমাধ্যমিক (একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি) রয়েছে। এটি সেখানে বহাল থাকবে। কলেজগুলো থেকে শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে। আবার স্নাতক-স্নাতকোত্তরও থাকবে।
কলেজগুলোর সময় ও জায়গা ভাগাভাগি করবে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি। অর্থাৎ, এইচএসসির ক্লাস সকালে, অনার্সেরে হয়তো দুপুরে বা বিকেলে ক্লাস হবে। আবার স্নাতক-স্নাতকোত্তরের ক্লাস কখন, কোন ভবনে হবে, একাদশ-দ্বাদশের ক্লাস কখন, কোন ভবনে হবে; সেটা ঠিক করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি এখন যে শিক্ষকরা কলেজগুলোর উচ্চমাধ্যমিক শাখায় (একাদশ-দ্বাদশ) শিক্ষকতা করছেন, তারা বহাল থাকবেন। অর্থাৎ, শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা কলেজগুলোর এইচএসসি পর্যায়ে শিক্ষক থাকবেন।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নামকরণ চূড়ান্ত করতে রোববার (১৬ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইউজিসি ভবনে দীর্ঘ বৈঠক হয়। সেখানে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা এবং ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের ৩২ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেন। বৈঠকের কিছুক্ষণের মধ্যে নাম চূড়ান্ত হয়ে যায়। তারপর শুরু হয় রূপরেখা নিয়ে আলোচনা। সেখানে কলেজের ঐতিহ্যকে ধারণ করে এমন কাঠামো তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে এটি চূড়ান্ত নয়।
অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘কলেজগুলো থাকবে, বিশ্ববিদ্যালয়টি শুধু কলেজের সময় ও জায়গা শেয়ার (ভাগাভাগি) করবে। এতে ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অবস্থান একই থাকবে। এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন তারা। তাদের জন্য শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষক থাকবে। এগুলো প্রাথমিক পরিকল্পনা, চূড়ান্ত কিছু নয়। এ পরিকল্পনায় পরিবর্তনও আসতে পারে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তাদের মতামতও আমরা নিচ্ছি, নেবো।’
সাত কলেজ নিয়ে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ নিয়ে বেশ জটিলতা দেখা দেয়। ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের প্রস্তাবিত ও সদ্যসাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের পছন্দের প্রস্তাবিত নাম ছিল ‘জুলাই ৩৬ বিশ্ববিদ্যালয়’। তবে তাতে সাড়া ছিল না শিক্ষার্থীদের। ফলে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নাম আহ্বান করে ইউজিসি। তাতে যেসব নাম আসে, তা থেকে ৪০টি নাম প্রস্তাবে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে একটি নাম পছন্দ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিষয়টি জানিয়ে সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তর আন্দোলন টিমের ফোকাল পয়েন্ট ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, ‘ইউজিসির পক্ষ থেকে মোট ৪০টি নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। তার মধ্যে দুটি নাম নিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। একটি হলো—ঢাকা ফেডারেল ইউনিভার্সিটি। আরেকটি ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি। প্রথম ফেডারেল ইউনিভার্সিটি নামটির পক্ষে মত দিয়েছিলেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। পরে আরও আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নামকরণ করা হয়।’
নাম ঠিক হলেও সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বহুল প্রত্যাশিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে আরও ৫-৬ বছর সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন ইউজিসি কর্মকর্তারা। তাদের মতে, বর্তমানে যে চারটি ব্যাচ রয়েছে এবং চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে যারা ভর্তি হবেন, তাদের শিক্ষা কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালনা করতে হবে। তাছাড়া কার্যত কোনো উপায় নেই।
ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ-পরিচালক মো. জামাল উদ্দীন জানান, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধীনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে ২০৩১ সাল পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। চলতি বছরও ঢাবির অধীনে অনার্সে ভর্তি করা হবে। ঢাবি নতুন একটি প্রশাসনিক আইনের মাধ্যমেই সাত কলেজের কার্যক্রম চালাবে।তবে এতদিন সময় লাগবে না বলে মনে করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ। তিনি বলেন, ‘নাম চূড়ান্ত হয়েছে। এখন সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। সংসদ কার্যকর না থাকায় আইনটি কীভাবে করা সম্ভব, তা নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পরামর্শ চাওয়া যেতে পারে। তাদের পরামর্শে রূপরেখা চূড়ান্ত করে শিগগির ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির কার্যক্রম শুরু করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে ইউজিসি।’