বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ০৭:৩৭ পূর্বাহ্ন
সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
এ সময় তিনি ডিসিদের নিজেদের ভেতর প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব রাখার পরামর্শ দেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সরকারকে একটা টিম হতে হবে। সরকার চালাতে টিম ওয়ার্ক লাগে। টিম গঠনের জন্য সবাই একত্র হয়, তখন কার কী করণীয়, সেগুলো নিয়ে আলোচনা থাকে।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনসূ বলেন, “সরকার গঠনের পর ছয় মাস চলে গেল। আয়োজনের জন্য এটাকে আমরা বলছি প্রথম পর্ব। আয়োজনের সময় অনেক ভুলভ্রান্তি হয়েছে। এখন সেগুলো ঠিক করে পুরো খেলার জন্য প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, “আজকের এই বৈঠক যদি বড় কোনও কোম্পানির এক্সিকিউটিভদের নিয়ে হতো। তাদের যারা শরিক থাকতো তারা কী বলতো, নিশ্চয়ই ম্যানেজিং ডিরেক্টরের প্রশংসায় সময় নষ্ট করতো না। তারা বলতো আমাকে এই কাজ দিয়েছেন, আমি এই কাজ করেছি, আমার এই সাফল্য হয়েছে, এখন ওই কাজের জন্য প্রস্তুত। এখানে দুটি উদাহরণ তুলে ধরলাম। একটা মাঠের খেলোয়াড়দের নিয়ে আরেকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ফিল্ড অফিসারদের বক্তব্য। ”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “এই সরকারের খোলোয়াড় আমরা যারা আছি, তাদের ভূমিকা ওই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে কোনও একটির মতো হতে হবে। অমরা কী করছি কী করা দরকার সেগুলো নিয়ে আলোচনা। ”
ড. ইউনূস বলেন, “আজকের এই সম্মেলনে আমাকে প্রধান অতিথি বলাতে কষ্ট পেলাম। যেন আমাকে বাইরে রাখা হলো এই খেলার মাঠ থেকে। হওয়া উচিত ছিল আমি খেলার ক্যাপ্টেন। আমি অতিথি নই, ক্যাপ্টেন হিসেবে বক্তব্য দিতে চাই। ”
সরকারে কাজ কী ধরনের তা হাতেগোনা মাপা জিনিস উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “কাজ একই, তবে বারেবারে একেক ভঙ্গিতে আসছে। সেসব কাজ কে কীভাবে করছি, কীভাবে হলে ভালো হতো, ক্যাপ্টেনের সিগন্যালটা কীভাবে যাওয়া দরকার এগুলো নিয়ে আলোচনা। ”
কো-অর্ডিনেশন নিয়ে সম্মেলনে আলোচনার পরামর্শ দিয়ে ড.মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “আমাদের বোঝাবুঝির মধ্যে যেন গলদ না থাকে। সেখানে কী কী বিষয় অন্তর্ভুক্ত সবার ভালো করেই জানা আছে। জেলার দায়িত্ব সামগ্রিকভাবে একজনের ওপর। তার সঙ্গে বাকিদের কো-অর্ডিনেশন করতে হয়। সেই কো-অর্ডিনেশনের কী সমস্যা, নাকি পৃথক পৃথকভাবে হবে এগুলো পরিষ্কার করে নেওয়া। ”
তিনি আরও বলেন, “শৃঙ্খলা ভঙ্গ হলে কী করতে হবে। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত চেইন অব কমান্ড কীভাবে যাবে। এমনটা নয় যে, আমার কাজ ছিল না, তাই মনোযোগ দিই নাই। এটা হতে দেওয়া যাবে না। কারণ আমরা হলাম সরকার। তাই এসব দায় এড়ালে হবে না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “নারী ও শিশুদের রক্ষা বিশেষ দায়িত্ব। সংখ্যালঘুদের রক্ষা মস্তবড় দায়িত্ব। কারণ বিষয়টি নিয়ে আমাদের ওপর সারা দুনিয়া নজর রাখে। সরকারের দায়িত্ব হলো সব নাগরিকের সুরক্ষা বিধান করা। সামনে আমাদের যেসব কর্মসূচি নেব, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার কথা মাথায় থাকবে। ”
বাজার দর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “সেখানে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা থাকতে পারে। আমার জেলার বাজারদর সবচেয়ে ভালো। আমার জেলার শান্তিশৃঙ্খলা সবচেয়ে ভালো। আমার জেলায় কোনও চাঁদাবাজি নেই। খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রতিযোগিতায় আমি ওপরে আছি। চেষ্টায় যেন পিছিয়ে না পড়ি। র্যাংকিং থাকলে নিজেদের মধ্যে আনন্দ হয়। সবার মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব আসুক। ”
ডিসিদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “এটাই সুযোগ নিজেকে প্রকাশ করার, সৃজনশীলতা প্রকাশ করার। গৎবাঁধা কাজ থাকবে, তবে সৃজনশীলতাও থাকতে হবে। ”
জন্মসনদ ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “পয়সা দিলে সনদ চলে আসে, কিন্তু না দিলে আসে না কেন? এটা নাগরিকের অধিকার। তাহলে সরকার পারবে না কেন, অবশ্যই ব্যবস্থা রয়েছে। সেই ব্যবস্থাটাই আমাদের করতে হবে। ”
পাসপোর্ট ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পাসপোর্ট করতে পুলিশ ভেরিফিকেশন লাগবে না। পাসপোর্ট তো আমার নাগরিক অধিকারের একটা অধিকার।
তিনি বলেন, আমি চোর না ডাকাত সেটা পুলিশ আলাদাভাবে বিচার করবে। আমাকে যে জন্ম সনদ দিয়েছেন, সেটা তো কোনও পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে করেননি। আমাকে এনআইডি দিয়েছেন সেটাও কোনও পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়ে করেননি, নাগরিক হিসেবে পেয়েছি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা আইন করে দিয়েছি, কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে পৌঁছেনি, অথচ আমরা এখানে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছি। এই যে দূরত্ব এটা যেন না থাকে। এগুলোর কোনও কারণ নেই, বিনা কারণে মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে। হয়রানি করাটাই যেন আমাদের ধর্ম। সরকার মানেই মানুষকে হয়রানি করা, এটাকে উল্টে দিতে হবে। সরকার ভিন্ন জিনিস। আপনার অধিকার পৌঁছে দেওয়াই আমাদের কাজ।
এ ধরনের সিদ্ধান্তগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।